সৎসঙ্গ:
সৎসঙ্গ বা অনুকূল ঠাকুরের শিষ্যরা ভ্রান্ত পথে আছে।কারন, ধর্মের পথ হচ্ছে গুরু ও কৃষ্ণের প্রতি অনুগত থাকা।কিন্তু এখানে সবাই অনুকূল ঠাকুরের প্রতি অনুগত, কৃষ্ণের প্রতি নয়।এর কারন হল, সৎসঙ্গের কেউ অনুকূল ঠাকুরের কাছ থেকে দীক্ষা নেইনি।নিয়েছে হাবিজাবি মানুষদের কাছ থেকে, আর নাম দিয়েছে অনুকূল ঠাকুরের। অনুকূল ঠাকুর আজ থেকে ৫০ বছর আগে দেহ ত্যাগ করেছেন।তবু এখনো তার নামে দীক্ষা দেওয়া হয়।অর্থাৎ এখন যারা সৎসঙ্গ থেকে দীক্ষা নিবে, তারা কোন দিন পরলোক গত গুরু অনুকূল ঠাকুরের কোনদিন সাক্ষাৎ পাবে না।বুঝতে পারছেন আমাদের কত বোকা বানানো হচ্ছে। গুরুর কাছে যেতে হয়, তার মুখের কথা শুনতে হয়।কিন্তু সৎসঙ্গীরা হচ্ছে দুর্ভাগা, তারা কোনদিন তাদের গুরু অনুকূল ঠাকুরকে দেখেনি, কোনদিন দেখবেও না।
দীক্ষা দেওয়ার নামে এটি একটি মালটিন্যাসনাল কোম্পানি। মার্কেটিং অফিসার নামে হাজার হাজার ঋত্বিক নিয়োগ দেওয়া হয়।তারপর তাদের গ্রামে গ্রামে পাঠানো হয়,যাও যে ভাবে পারো অনুকূল ঠাকুরের নামে দীক্ষা দিয়ে এসো।এখন এই অফিসার ঋত্বিকরা তাদের চাকুরী বাঁচানোর জন্য হন্যে হয়ে গ্রামে গ্রামে, এলাকায় এলাকায় ঘুরে বেড়ায়।মাসে যদি ৫০ থেকে ১০০ টি দীক্ষা দিতে না পারে,তবে ঋতিক চাকুরী থেকে বরখাস্ত করা হবে।তখন কি লজ্জা? এই ভয়ে তারা মানুষদের দীক্ষা দেওয়ার জন্য বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করেন।বিভিন্ন লোভ দেখান অথবা বিভিন্ন ভয় দেখান।
যারা সৎসঙ্গ থেকে দীক্ষা নিয়েছেন, তারা জানেন, দীক্ষার সময় শপত করানো হয় যে, আজ থেকে অনুকূল ঠাকুরকে প্রতিষ্ঠা করাই আমার জীবনের মূল লক্ষ্য।আপনের কি মনে হয়, এটা অনুকূল ঠাকুরের কথা? এটা অন্য কোন ব্যক্তির কথা।অনুকূল ঠাকুরের কাছ থেকে যদি দীক্ষা নিতেন, তবে আপনাকে শিখাতো,ভগবানকে প্রতিষ্ঠা করা তোমার জীবনের মূল লক্ষ্য হোক।
আপনি সৎসঙ্গ মন্দিরে গিয়ে ভগবানের কোন ছবি বা বিগ্রহ পাবেন? পাবেন না। কারন এরা অনুকূল ঠাকুরকে ভগবান বানিয়ে, তাকেই আসনে বসিয়ে রেখেছে।সৎসঙ্গের ভগবান বা সৃষ্টিকর্তা হচ্ছে অনুকূল ঠাকুর।তাদের অন্য আর কোন ঈশ্বর নেই। হয়তো বা কোন একদিন বলবে আমরা হিন্দু না আমরা সৎসঙ্গী।আমাদের সৃষ্টিকর্তা ভগবান অনুকূল। আর তার মুখের বাণী পুর্ণপুথি।
এই কথা গুলোর প্রমাণ চান? আমাকে দুজন ঋত্বিক বলেছিল, তুমি গলায় তুলসীর মালা কেন পড়েছো, ছিড়ে ফেল,কলিযুগে কোন তুলসীর মালা নেই।আবার আরেক জন বলেছিল, তুমি শিব মন্দিরে, কৃষ্ণ মন্দিরে কেন যাবে, আমরা সৎসঙ্গী, আমাদের অনুকূল ঠাকুর আছে।
এখন এই যদি হয় তাদের মনোভাব, তাহলে ভবিষৎতে তু আরো ব্যাপক আকার ধারন করবে।
অনুকূল ঠাকুরকে আগে গুরু বলতো, তারপর যুগাবতার বলা শুরু করলো, আর এখনতো সরাসরি ভগবানই বলা হয়।আর ভবিষৎতে হয়তো বা বলবে, পরমেশ্বর ভগবান অনুকূল ঠাকুর আমাদের সকলের সৃষ্টিকর্তা, তাই আমাদের শুধু মাত্র তারই উপসনা করা উচিত, তারই শরণাগত হওয়া উচিত, অন্য আর কেউর নয়।
অনুকূল ঠাকুরের বউ, ছেলে মেয়ে, নাতি,পুতি এদের সবাইকে নিয়ে একটা ভগবান পরিবার।মন্দিরে শুধু এরাই থাকবে, আর কেউ নয়।সাধারণ হিন্দু যদি কখনো সৎসঙ্গ মন্দিরে যায়, সে অবশ্যয় তখন প্রশ্ন করিবে, যে এটা কোন পরিবারের মন্দির???
বি: দ্র: উপরের কথা গুলো পড়ে, কোন নাম ধারী অনুকূল ঠাকুরের শিষ্য কষ্ট নিবেন না।আপনেরা কথা গুলো চিন্তা করেন, সব কথা সত্যি কিনা।মন্দির হওয়া উচিত ছিল, মূল আসনে থাকবে ভগবান শ্রীকৃষ্ণ, আর পাশে থাকবে সৎসঙ্গের প্রতিষ্ঠাতা গুরু হিসেবে অনুকূল ঠাকুর। তাহলে কত সুন্দর হতো।কিন্তু অতি পাকনা শিষ্যরা কি বানিয়ে রেখেছে।আর দীক্ষা হবে পরম্পরা ধারায়। অনুকূল ঠাকুর এখন আর সামনে নেই, তাই এখন গুরু হিসেবে অন্য কাউকে তৈরি করতে হবে। সে শিষ্যের সকল দায়িত্ব নিবে।আর ভুল প্রচার না করে, অনুকূল ঠাকুরকে ভগবান না বানিয়ে কৃষ্ণ ভক্তি প্রচার করতে হবে। অনুকূল ঠাকুরও একজন পরম কৃষ্ণ ভক্ত,তিনি সব সময় কৃষ্ণ কথাই বলতেন।
@@ আসুন আমরা কিছু অনুকূল ঠাকুরের বাণী পড়ি।
১। মন ওখান থেকেই ঠিক হবে। ও তোর আধার ঘরে জ্বলবে আলো,হরে কৃষ্ণ বল। ( আলোচনা প্রসঙ্গে/২১/পৃ.২২৮ )
২। সমস্ত গীতার মধ্যে ঘুরে ফিরে ঐ ইষ্ট প্রাণ হওয়ার কথা, ঐ কৃষ্ণ প্রাণ হওয়ার কথা, সমস্ত মহাপুরুষদের কথা ঐ, শিক্ষাই ঐ, কাজই ঐ । ঐ টুকুর অভাবেই তো জন্ম জন্মাতরে কত কষ্ট। ভগবানকে যে বুকে বয়ে নিয়ে বেড়ায় তার আবার পরোয়া কি। ( আলোচনা প্রসঙ্গে/৬/পৃ.২০৭)
৩। কৃষ্ণ ভিন্ন উপায় নাই আর সংসারে । ( পুন্যাপুথি-১০/৮৫)
৪। তোদের লক্ষ্য ভগবান। (পুন্যপুথি-১১/৩২)
৫। কৃষ্ণ নামে বিপদ থাকে না। বিপদ আপদ আসতে পারে না। ( পুন্যপুথি-১২/৫৯ )
৬। কেবল দিবি, বলবি কৃষ্ণনাম করতে, সব দূর হবে । ( পুন্যপুথি-১২/৬১ )
৭। যে যায়গায় নাম কীর্তন হয় না, সে যায়গা শ্মশান বলে জানবি। হরে কৃষ্ণ নামে আধিব্যাধি সব দূর হয়, মুক্তি তার করতলে । ( পুন্যপুথি-১৭/২)
৮। সেই বিবেকের আকুল আহ্বান শুনে হরে কৃষ্ণ হরে কৃষ্ণ বলে ডাকায় তার সকল দুঃখ ঘুচে যায়। ( পুন্যপুথি-১৮/৩)
৯। জীব কৃষ্ণের নিত্য দাস যবে ভুলি গেলা, মায়া পিশাচী তার গলে দরি দিলা মানুষ যদি ভগবানের বাঁধনেবাঁধা না থাকে, তাহলে শয়তানের বাঁধনে বাঁধা পড়বেই যে কোন না কোন রকমে । ( আলোচনা প্রসঙ্গে,২য় খন্ড, ১২/১২/১৯৪১)
১০। ভগবান, ঈশ্বর, ঠাকুর বললে কেমন জানি আকাশের কেউ বা শূন্য শূন্য মনে হয়, তার থেকে কৃষ্ণ বললে নিজের বা আমার কৃষ্ণ মনে হয়। তাই ভগবান, ঈশ্বর , ঠাকুর এর চেয়ে কৃষ্ণ বললেই ভাল হয়। ( আলোচনা প্রসঙ্গে- ১৪ পৃষ্টা-৩৩)
--------------------------------------------
এখন আমাদের বিবেক দিয়ে চিন্তা করা উচিত, আমরা কোন পথে আছি।আমরা কি এখন বেদ গীতা অনুসারে চলবো, নাকি নিজেদের মত বিভিন্ন মত তৈরি করে, হিন্দু জাতিকে খন্ডে খন্ডে বিভক্ত করবো।এই সমস্যা কিন্তু শুধুমাত্র সৎসঙ্গে না, রামকৃষ্ণ মিশন, মাতুয়া সংঘ এই রকম অনেকেই। এদিক দিয়ে ইসকন, গৌড়ীয় মঠ,নিম্বাক অনেকটাই ভাল, কারন তাদের মূল লক্ষ্য কৃষ্ণ। আমরা যে সংঘেই থাকি, আমাদের মূল লক্ষ্য হোক, এক ঈশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণের প্রতি,বেদ- গীতা শাস্ত্রের প্রতি ও কলিযুগের মহামন্ত্র হরেকৃষ্ণ এর প্রতি।আর আমাদের মন হোক, আমরা সকল হিন্দু ভাই ভাই।হরেকৃষ্ণ