Tuesday, April 24, 2018

ভগবান প্রাপ্তি

বিষ্ণু পুরাণ ( ৬/২/৪০)

অত্যন্তদুষ্টস্য কলেরয়মেকো মহান গুণঃ
কীর্ত্তনাদেব কৃষ্ণষ্য মুক্তবন্ধঃ পরং ব্রজেৎ।

অনুবাদ- অত্যন্ত দুষ্ট কলির এই একটি মহান গুণ যে,এই কলিকালে মনুষ্যগণ কেবল কৃষ্ণনাম সংকীর্তন করিলেই সকল বন্ধন হইতে মুক্তিলাভ করত পরমপদ প্রাপ্ত হইয়া থাকে।

তাৎপর্য: ভগবানের দিব্য নাম পরম পবিত্র। কেহ যদি শ্রদ্ধার সহিত ভক্তি ভরে নামের প্রতি একনিষ্ঠতা আনে, তবে সে জাগতিক বন্ধন থেকে মুক্তি লাভ করে পরম পদ লাভ করেন।

কারা ভগবানের আরাধনা করে? গীতায় (৭/২৮)  ভগবান শ্রীকৃষ্ণ বললেন," যে সমস্ত পুণ্যবান ব্যক্তির পাপ সম্পূর্ণ রুপে দূরীভূত হয়েছে এবং যারা দ্বন্দমোহ থেকে মুক্ত হয়েছেন,তারা দৃঢ় নিষ্ঠার সহিত আমার ভজনা করেন।"
অর্থাৎ পরমেশ্বর ভগবানের আরাধনা তাহারাই করেন, যাহারা পাপ থেকে মুক্ত হয়েছেন,এবং ভগবানের প্রতি মনে কোন দিধা বা সন্দেহ নেই।

ভগবানকে স্মরণ করলে কি হবে? ভগবানকে লাভ করা যাবে।গীতায় (৮/৭) শ্রীকৃষ্ণ বললেন" মামেবৈষ্যস্যসংশয় " " নিঃসন্দেহে তুমি আমাকেই লাভ করবে ।"

ভগবানকে লাভ করলে কি হয়?
ভগবানকে লাভ করলে আর পুনর্জন্ম হয় না।গীতা ( ৮/১৬), " শ্রীকৃষ্ণ বললেন," আমাকে প্রাপ্ত হলে আর পুনর্জন্ম হয় না।"

মুক্তি লাভ করে জীব কোথায় যায়?  ভগবানের অপ্রকৃত ধামে।গীতা (৮/২০) " আর একটি অব্যক্ত প্রকৃতি রয়েছে,যা নিত্য এবং ব্যক্ত ও অব্যক্ত বস্তুর অতীত। সমস্ত ভূত বিনষ্ট হলেও তা বিনষ্ট হয় না।"
ভগবান আরো বললেন, গীতা(৮/২১)" কেউ যখন সেখানে যায়, তখন আর তাঁকে এই জগতে ফিরে আসতে হয় না।সেটিই হচ্ছে আমার পরম ধাম।"

তাই ভগবান বলেছেন,গীতা ( ৮/২৮)
" পরং স্থানমুপৈতি" পরম ধাম প্রাপ্ত হও।"

বেদেও ( কৃষ্ণযজুর্বেদ / ১/৩/৭) বলা হয়েছে, " হে মন,তুমি ভগবানের কাছে যাবার অভিলাষী হও,সাধন প্রভাবে তাঁর সান্নিধ্য লাভের জন্য উদ্বুদ্ধ হও। "

" ভগবানের কৃপায় আমাদের মঙ্গল হোক।( শুক্লযজুর্বেদ/ ৪/২০)

জয় শ্রীকৃষ্ণ
             
                     "ওঁ তৎ সৎ"

সমীর চন্দ্র পন্ডিত

Tuesday, April 3, 2018

আশীর্বাদ / সনাতন ধর্মের প্রচার

আশীর্বাদ::
--------------------------------------------------

আশীর্বাদ শব্দের অর্থ "কল্যাণ প্রার্থনা বা মঙ্গল কামনা। "আমাদের উচিত সবার, যে কোন শুভ কাজের জন্য সবার কাছে আশীর্বাদ চাওয়া।এতে মনে অহংকার কম ডুকতে পারে।

আশীর্বাদ শব্দের সার্বিক অর্থ দ্বারায়, ভগবানের কাছে প্রার্থনা করি, তোমার মন বাঞ্ছা যেন পূর্ণ হয়।

তাই, আশীর্বাদ চাওয়া ও আশীর্বাদ করা দুটিই মঙ্গল জনক।

      " সমীর চন্দ্র পন্ডিত "

অনুগীতা / সনাতন ধর্মের প্রচার

ভগবান শ্রীকৃষ্ণ কি পরমব্রহ্ম'র সাথে যোগ যুক্ত হয়ে গীতা জ্ঞান দান করেছেন? নাকি তিনি নিজেই পরমব্রহ্ম?
(জানতে হলে অবশ্যই পড়বেন)
________________________________________

কুরুক্ষেত্রে যুদ্ধকালে ভগবান শ্রীকৃষ্ণ অর্জুনের নিকট যে গীতামৃত কীর্ত্তণ করেছিলেন, সেই পবিত্র গীতাজ্ঞান অর্জুন ভুলে গিয়ে অশ্বমেধপর্বে শ্রীকৃষ্ণের নিকট পুণরায় শুনতে চান । তখন ভগবান শ্রীকৃষ্ণ বলেন, “তুমি নিশ্চয় দুর্ম্মেধা, তাই আমার সেই সকল কথা স্মরণ রাখিতে পার নাই ৷” তিনি আরও বলিলেন—
পরম হি ব্রহ্ম কথিতং যোগযুক্তেন তন্ময়া।
ইতিহাসস্তু বক্ষ্যামি তস্মিন্নর্থে পুরাতনম্ ৷৷
অর্থাৎ— ‘তৎকালে আমি যোগযুক্ত হইয়া পরব্রহ্মের বিষয় বলিয়াছিলাম, এখন সেই বিষয়ে প্রাচীন বৃত্তান্ত বলিতেছি ৷’
(মহাভারত, আশ্বমেধিকপর্ব্ব, অনুগীতা)
লক্ষ্যণীয় যে, যোগ শব্দের নানা প্রকার অর্থ আছে ৷ এখানে কোন অর্থে যোগ-শব্দটি ব্যবহৃত হয়েছে তা স্পষ্ট লেখা আছে—
‘যোগযুক্তেন ঐক্যাগ্রসমন্বিতেন’ (ভারতকৌমুদী টীকা)
অর্থাৎ এখানে যোগযুক্ত অর্থ একাগ্রতার সহিত ৷
ভগবান শ্রীকৃষ্ণ যুদ্ধকালে অর্জুনকে যুদ্ধে প্রবৃত্ত করার জন্য যে সকল বাক্য ব্যয় করেছিলেন একাগ্রতার সহিত, তা আবার এখন পুণরোক্তি করবেন কিসের নিমিত্ত? তাছাড়া অর্জুন যে গীতা ভুলে গেছেন তার দুর্বল মেধাবশত, তাকে পুণরায় গীতা বললেও সে যে আবার ভুলে যাবে না তারই বা গ্যারান্টি কি? তাই ভগবান শ্রীকৃষ্ণ বললেন, “আমি সেই বিষয়ে তোমাকে প্রাচীন বৃত্তান্ত বলিতেছি ৷” অর্থাৎ সেই গীতাজ্ঞানই তিনি প্রকারন্তরে ইতিহাস গল্পের মাধ্যমে বলিবেন ৷ কেননা গল্পের মাধ্যমে যদি খুব কঠিন বিষয়ও আলোচনা করা হয়, তবে সেটা খুব সহজেই মনে রাখতে পারা যায়। এই জন্যই ভগবান শ্রীকৃষ্ণ সেই উপায়টি অবলম্বন করেন। পরবর্তীতে গীতাজ্ঞান জ্ঞান এইরুপে ভিন্নভাবে কথিত হওয়ায় একে ‘অনুগীতা’ বলা হয় ৷ অনুগীতা প্রদানের পর ভগবান বলিলেন—
পূর্বমপ্যেতদেবোক্তং যুদ্ধকাল উপস্থিতে।
ময়া তব মহাবাহো তস্মাদত্র মনঃ কুরু।।
(অশ্বমেধিকপর্ব, ৬৬/৭)
“মহাবাহু! পূর্বেই কুরুক্ষেত্রে যুদ্ধের সময় উপস্থিত হইলে, আমি তোমার নিকট ভগবদগীতাস্বরূপ এই বিষয়ই বলিয়াছিলাম, অতএব তুমি এই বিষয়ে মনোনিবেশ কর।”
অতএব এইটা সুস্পষ্ট যে ভগবান যদিও সরাসরি ভাবে অর্জুনকে পুনরায় গীতা জ্ঞান প্রদান করতে অসম্মতি জানান তবুও ইতিহাসের মাধ্যমে ভগবান এখানে গীতার বিষয়ই তুলে ধরেছেন, যাতে করে অর্জুন সেই জ্ঞানটা আয়ত্ত করতে পারে ৷
.
এইরুপে সমগ্র বিষয়টি বুঝতে না পেরে অন্ধের হস্তিদর্শনের ন্যায় কিছু অকাল-কুষ্মান্ড মূর্খ বলে থাকে যে, শ্রীকৃষ্ণ সাধারণ মানুষ মাত্র, তিনি গীতা বিস্মৃত হয়েছিলেন, গীতা তাঁহার নিজস্ব উক্তি নয়, তিনি পরমাত্মার সহিত যোগযুক্ত হয়ে উহা বলেছিলেন ৷ সেই মূর্খদের উদ্দেশ্যে বলিতেছি, আপনারা যে অশ্বমেধপর্বের রেফারেন্স দিয়ে ঐসকল কথা বলিতেছেন, ঐ অশ্বমেধপর্বেই যুধিষ্টির শ্রীকৃষ্ণকে উদ্দেশ্য করে কি বলিতেছে দেখুন—
“হে বিশ্বকর্মন! হে বিশ্বাত্মন! হে বিশ্বশ্রেষ্ঠ! আমি মনে মনে তোমাকে যেরূপ ধারণা করি, কার্য্যদ্বারাও তোমাকে সেইরুপই জানিতেছি।”
“প্রভু মধুসূদন! অগ্নি সর্বদাই তোমার তেজ হইতে উৎপন্ন হন এবং রতি তোমারই ক্রিয়াস্বরূপা, আর স্বর্গ ও মর্ত তোমারই মায়া।”
(মহাভারত, অাশ্বমেধিকপর্ব ৬৭/৮-৯)
.
অতএব—
যশ্চ মানুষমাত্রোহ‘য়মিতি ব্রুয়াৎ স মন্দধীঃ ৷
হৃষীকেশমবিজ্ঞানাত্তমাহু পুরষাধমম্ ৷৷
—“যে লোক অজ্ঞানবশতঃ এই হৃষীকেশকে মানুষমাত্র বলিবে সে মন্দবুদ্ধি, সকলে তাকে ‘নরাধম’ বলিবে ৷”
(মহাভারত, ভীষ্মপর্ব, ৬৫/১৯)
.
সবশেষে—
সারথ্যমর্জুনস্যাজৌ কুর্ব্বন গীতামৃতং দদৌ ৷
লোকত্রয়োপকারায় তস্মৈ ব্রহ্মাত্মনে নমঃ ৷৷
“যিনি যুদ্ধে অর্জুনের সারথ্য করিতে প্রবৃত্ত হইয়া, ত্রিভূবনের উপকার করিবার জন্য অর্জুনকে গীতামৃত দান করিয়াছেন সেই পরমব্রহ্মরূপী কৃষ্ণকে নমষ্কার করি।”
(মহাভারত, শান্তিপর্ব ৪৬/১০৬)
[Reference book: মহাভারত, হরিদাশ সিদ্ধান্তবাগীশ]

সংগ্রহ