Sunday, September 9, 2018

শ্রী শ্রী ঠাকুর অনুকূল চন্দ্র

শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূল চন্দ্রের আদর্শ ও উপদেশ::

----------------------------------------------------------
শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্র (১৪ই সেপ্টেম্বর, ১৮৮৮- ২৬শে জানুয়ারি, ১৯৬৯) বাঙালি ধর্ম সংস্কারক। শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্র সৎসঙ্গ নামক সংগঠনের প্রবর্তক। তিনি ব্রিটিশ ভারতের বঙ্গ প্রদেশের পাবনা জেলার হিমায়তপুরে জন্মগ্রহণ করেন, যা বর্তমানে
বাংলাদেশের অন্তর্গত। ঝাড়খণ্ডের দেওঘরে দেহত্যাগ  করেন।

অনুকূলচন্দ্রের পিতা শিবচন্দ্র ছিলেন নিষ্ঠাবান ব্রাক্ষ্মণ। তার জননী মনোমোহিনী দেবী ছিলেন একজন স্বতীসাধ্বী রমনী। তিনি উত্তর ভারতের যোগীপুরুষ শ্রী শ্রী হুজুর মহারাজের শিষ্য। ঠাকুর অনুকূলচন্দ্র মায়ের কাছেই দীক্ষা গ্রহন করেন।

ঠাকুর অনুকূল চন্দ্র হিন্দুধর্ম তথা হিন্দু সমাজের একজন মহাপুরুষ, বিশ্ব মানবতাবাদী এবং পরম কৃষ্ণ ভক্ত।
আনোমানিক তার ১০০ টির মত গ্রন্থ রয়েছে। যে গুলো ৮০ ভাগই নীতিশিক্ষা। কি ভাবে মানুষ ভাল থাকবে, সুস্থ থাকবে, শান্তিপূর্ণ ভাবে সবাই মিলে মিশে থাকবে, সেই শিক্ষাই দেওয়া হয়েছে।

পৃথিবীতে বহু মানবতাবাদী রয়েছে, তবে তার মত শ্রেষ্ঠ আর কেউ নেই,তিনি সকল মানুষকে নিয়েই ভাবতেন, সকল মানুষেরই পাশে দাড়াতেন।

                       কৃষ্ণ ভক্তি
                      -----------------

            ## ঠাকুর অনুকূল চন্দ্র সব সময় চাইতেন, আমার অনুসারিরা সব সময় কৃষ্ণ ভক্তির পথে থাকুক। কারন ভগবানের উপাসনা ছাড়া মুক্তি লাভের কোন উপায় নেই।

১/ কৃষ্ণ ভিন্ন উপাই নাই আর সংসারে ( পুন্যপুথি,১০/৮৫)

২/ ভগবান ব্যতিরেকে উপাস্য নাই।ঋষিগণ তাহারই বার্ত্তিক। ( আলোচনা প্রসঙ্গে, ৬)

৩/ তোদের লক্ষ্য ভগবান। (পুন্যপুথি, ১১/৩২)

             ভগবানে মন স্থির
           -----------------------------

                 ## মনকে স্থির রাখার উপায় কি?  কি ভাবে ভগবানের পথে একাগ্রতা আসবে, এ বিষয়ে ঠাকুর অনুকূল চন্দ্র বলেছেন,

১/ বাসুদেবই ( কৃষ্ণ)  সব হলে একাগ্রতা সহজ হয়।( আলোচনা প্রসঙ্গে, ২১)

২/ সমস্ত গীতার মধ্যে ঘুরে ফিরে ঐ ইষ্ট প্রাণ হওয়ার কথা, ঐ কৃষ্ণ প্রাণ হওয়ার কথা,সমস্ত মহাপুরুষদের কথাই ঐ,শিক্ষাই ঐ, কাজই ঐ।ঐ টুকুর অভাবেই তো জন্ম জন্মান্তরে কত কষ্ট। ভগবানকে যে বুকে বয়ে নিয়ে বেড়ায় তার আবার পরোয়া কি?  ( আলোচনা প্রসঙ্গে /৬/পৃ.২০৭)

৩/ ভগবানকে জানা মানেই সমস্তটাকে বুঝা বা জানা। (আলোচনা প্রসঙ্গে)

৪/ বসুদেবের ছেলে শ্রীকৃষ্ণ,রক্ত মাংস সঙ্কুল এই প্রতীকই যা কিছু সব,এই বোধই চরম বোধ।( আলোচনা প্রসঙ্গে, ২য় খন্ড, ২০/১২/৪১)

                  ঈশ্বরের নাম
                -----------------------

               ## ঈশ্বর বা সৃষ্টিকর্তাকে কোন নামে ডাকা সর্বোত্তম, আমরা এ বিষয়ে অনেক সময় দ্বিধায় পড়ে যাই।তাই ঠাকুর অনুকূল চন্দ্র আমাদের এ বিষয়ে সকল সমস্যার সমাধান করে দিয়েছেন, যাতে আমাদের মনে আর কোন দ্বিধা না থাকে।

১/ ভগবান,ঈশ্বর,ঠাকুর বললে কেমন জানী আকাশের কেউ বা শূণ্য শূণ্য মনে হয়,তার থেকে কৃষ্ণ বললে নিজের বা আমার কৃষ্ণ মনে হয়। তাই ভগবান, ঈশ্বর, ঠাকুর এর চেয়ে কৃষ্ণ বললেই ভাল হয়। ( আলোচনা প্রসঙ্গে - ১৪, পৃষ্ঠা -৩৩)
৭, ১৫ খন্ড,১৬/১/৪৯)

৩/ তবে সেই আদি কারনকে জানতে হবে,অনাদিরাদি - গোবিন্দে যেয়ে পৌছাতে হবে।তাকে না পেলে কিছুই পাওয়া হলো না,তাকে না জানলে কিছুই জানা হলো না। ( আলোচনা প্রসঙ্গে, ২য়,,২১/১২/৪১)

৪/ ভূত মহেশ্বরের একটা দিক হলেন শ্রীকৃষ্ণ।তিনি বেত্তাপুরুষ। বিধি তার বোধিতে স্ফুরিত হয়েছে। ( আলোচনা প্রসঙ্গে / ২১/ পৃ.২৯৬)

        ভগবানের সাথে আমাদের সম্পর্ক
      --------------------------------------------------

                 ## ঠাকুর অনুকূল চন্দ্র এমনি পরম ভক্ত ছিলেন যে, তার সারা জীবনের সকল কর্ম, বলা,চলা সকল কিছুই ভগবানের কৃপা বলে মনে করতেন।এবং সকলেই বুঝাতেন ভগবানের সাথে আমাদের সম্পর্ক কতটুকু।

১/ পরমপিতা দিলে হয়, আমি বুদ্ধি করে বা চেষ্টা করে কিছু বলতে পারি না।তিনি যখন যা যোগান,তেমনি বলি,তেমনি চলি।এছাড়া আমার উপায়ও নেই।( আলোচনা প্রসঙ্গে, ২য়, ২০/১২/৪১)

২ / জীব কৃষ্ণের নিত্য দাস যবে ভুলি গেলা,মায়া পিশাচী তার গলে দড়ি দিলা।মানুষ যদি ভগবানের বাঁধনে বাঁধা না থাকে, তাহলে শয়তানের বাঁধনে বাঁধা পড়বেই যেকোন না কোন রকমে। ( আলোচনা প্রসঙ্গে, ২য়,১২/১২/১৯৪১)

৩/ ভগবান সবার কাছে সমান। আমরা ভগবানকে ততখানি পাই যতখানি ভক্তি অনুরাগে তার দিকে অগ্রসর হই।আলোর কাছে যত যাব তত আলো অনুভব করব ও তাপ পাব।কম-বেশী বোধ হয় আমাদের এগোন- পিছোন অবস্থায় থাকার দরুন।( আলোচনা প্রসঙ্গে, ১২ খন্ড,১৯/৬/৪৮)

৪/ সেই শোক ভাল যা ভগবানের দিকে টেনে নিয়ে যায়।ভগবানের থেকে বিচ্ছিন্ন করে যা, তা তো ভাল না। ( আলোচনা প্রসঙ্গে, ১৫ খন্ড,১২/২/৪৯)

৫/ যাদের চলা, বলা,করা,জানা ভগবানে অর্থান্বিত হয়ে উঠেনি,বাস্তবে,সমন্বয়ে,সামঞ্জস্যে তাদের জ্ঞান যাই হোক না কেন তা পল্লবগ্রাহী মাত্র,বিদ্যা অনেক দুরে তাদের থেকে। ( শাশ্বতী-৬)

৬/ আমার ছেলেবেলা থেকে ধারনা ছিল যে,কেষ্ট ঠাকুর কালো,কিন্তু যখন সন্ধ্যা -টন্ধ্যা করতে বসে তাঁকে দেখতাম,তখন দেখতাম বৌসন্ধ্যার যেমন রঙ,তাঁর গায়ের রঙও তেমনি। ( আলোচনা প্রসঙ্গে - ২২ খন্ড, ২৫/১১/১৯৫৩)

                        গীতা
                      ------------

               ## ঠাকুর অনুকূল চন্দ্র ভগবদগীতার কথা বার বার বলতেন।গীতা পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণের বাণী।গীতা ছাড়া সনাতনী সমাজের উন্নতি সম্ভব নয়,এজন্যই ঠাকুর অনুকূল চন্দ্র সকলে গীতা মুখস্থ, ওঠস্থ করতে বলেছেন।

১/ তোরা কতকগুলি গীতার শ্লোক ঠিক করে ফেলবি।গীতা ওঠস্থ হওয়া চাই।গীতাতে সব পাবি। ( পূণ্যপুথি,১১/৩৬)

২/ গীতা সবাইকে পড়াবি।বুঝুক,না বুঝুক,শুনুক,পড়ুক,একদিন বুঝতে পারবে। ( পূণ্যপুথি, ১২/৪২)

৩/ গীতা সম্বন্ধে শাস্ত্রে যত কথা আছে, সবই ঠিক। গীতায় আলোচনা করা আছে,মৌলিক ভাগবত সত্য নিয়ে।আর এটা সনাতন অর্থাৎ চিরন্তন।( আলোচনা প্রসঙ্গে, ১২ খন্ড,৩/৬/৪৮)

                      হরেকৃষ্ণ
                   ------------------

                  ## হরেকৃষ্ণ মহামন্ত্র  ছাড়া যে জীবের মুক্তি নেই,এ কথা  ঠাকুর অনুকূল চন্দ্র বার বার বলে গেছেন।আমাদের সকল বিপদ আপদ থেকে মুক্তির উপায় একমাত্র কৃষ্ণ নাম।তাই এই কৃষ্ণ নাম অর্থাৎ হরেকৃষ্ণ জপ, হরেকৃষ্ণ কীর্তন  যেমন নিজের নিতে হবে, তেমনি প্রচারও করতে হবে, এই আদেশই  তিনি আমাদের দিয়েছেন।তিনি সকাল সন্ধ্যা প্রার্থনার প্রচলন করেছেন, যেখানে সকাল সন্ধ্যায় বলতে হয়, " জয় রাধে রাধে কৃষ্ণ কৃষ্ণ গোবিন্দ গোবিন্দ বলরে।" অর্থাৎ আমরা যেন সব সময় কৃষ্ণ কৃষ্ণ গোবিন্দ গোবিন্দ বলি, সেই শপতই সকাল সন্ধ্যায় করা হয়।

               কৃষ্ণ নাম:
              ---------------
১/ কৃষ্ণ নামে বিপদ থাকে না। বিপদ আপদ আসতে পারে না। ( পূণ্যপুথি, ১২/৫৯)

২/ কেবল দিবি, বলবি কৃষ্ণ নাম করতে, সব দূর হবে। ( পূণ্যপুথি, ১২/৬১)

৩/ যে জায়গায় নামকীর্তন হয় না,সে জায়গা শ্মশান বলে জানবি।হরেকৃষ্ণ নামে আধিব্যাধি সব দূর,ভব রোগ দূর,মুক্তি তার করতলে।( পূণ্যপুথি, ১৭/২)

৪/ সেই বিবেকের আকুল আহ্বান শুনে হরেকৃষ্ণ হরেকৃষ্ণ বলে ডাকায় তার সব দুঃখ ঘুচে যায়। ( পূণ্যপুথি, ১৮/৩)

৫/মন ওখান থেকেই ঠিক হবে।ও তোর আধার ঘরে জ্বলবে আলো,হরেকৃষ্ণ বল।( আলোচনা প্রসঙ্গে, ২১, পৃ.২২৮)

                    কীর্তন
                ----------------
১/ কীর্তনটা প্রত্যেক দিন করতে হয়।যদি লোক না থাকে তবে একলা করবি।( পূণ্যপুথি, ২৩/২৭)

২/ সংকীর্তন কর,সংকীর্তন প্রচার কর।( পূণ্যপুথি, ১/২৬)

৩/ কীর্তনে ঢুকতে হলে ঘৃণা,লজ্জা,মান,অপমান সব ছেড়ে দিতে হবে।গান গাবি সব ভাববি ইষ্টদেব।যাহা দেখবি - " যাহা যাহা দৃষ্টি পড়ে,তাহা তাহা কৃষ্ণ স্ফুরে।" ভাব অবস্থা আর কিছুই নারে ইচ্ছা। ( পূণ্যপুথি - ১০/২৯)

৪/ কীর্তন আগুনে যজ্ঞ ছেয়ে ফেল।কীর্তনময় হলেই নামময় হল।আবার শ্যামের বাঁশি বেজে উঠবে। ( পূণ্যপুথি, ১০/৭৪)

৫/ কেবল কীর্তন!  ভাবা চিন্তার সময় নাইরে।কীর্তন করবি আর সব করবি।(পূণ্যপুথি, ২৩/২৮)

                         প্রচার
                      ---------------

১/ প্রাণে প্রাণে জাগিয়ে দিবি।শব্দে, ভাবে, ছলে,বলে,কলে, কৌশলে যেমন করেই হোক জাগিয়ে দিবি।ঐ সংকীর্তন একবার যদি জাগিয়ে দিতে পারিস,তখন বুঝবে যে এরাই আমার বন্ধু। ( পূণ্যপুথি, ৯/৩৮)

২/ বিষয়ীদের কাছে কি ভগবানের নাম ভাল লাগে? তারা টাকা টাকা করতে ভালবাসে।তাদের কাছে টাকা টাকা করতে করতে ভগবানের নাম উঠাতে হয়।( পূণ্যপুথি, ১৮/১২)

৩/ দ্যাখ এ বাজারে ভিক্ষা চাইবি কি জানিস? একবার প্রাণ ভরে, মনভরে হরিবোল হরিবোল গোবিন্দ গোবিন্দ বল।ভাই আমি সারাদিন খাইনি,আজ কেউ হরি বলেনি।তুমি একবার হরিবোল, হরিবোল বল।তবেই আমার পেট পুরে যাবে, এই ভিক্ষা চাই। ( পূণ্যপুথি, ২৫/১০)

                    সদগুরু
                 ----------------

                    ## গুরুর মাধ্যমে ভগবানকে লাভ করতে হয়।গুরু ভগবানের প্রতিনিধি। ভগবান কি বলেছেন,শাস্ত্রে কোথায় কি আছে, তা হাতে ধরে শিষ্যকে শিখিয়ে দেওয়াই গুরুর কাজ।

ঠাকুর অনুকূল চন্দ্র একজন সমাজ সংস্কারও, সমাজের বিভিন্ন কুসংস্কার দূর করার জন্যও তিনি বিভিন্ন বাণী দিয়েছেন।বর্তমানে বিভিন্ন গুরু বা তাদের শিষ্যের প্ররোচনায় নিজেকে কৃষ্ণ দাবি করেন,অথবা শিষ্যরাই তাদের গুরুকে ভগবান বানিয়ে দেন।সেই গুরুকে ভগবান বানিয়ে তার নাম প্রচার করেন, তার নামে মন্দির প্রতিষ্ঠা করেন।তাই এই কুসংস্কার দূর হওয়ার জন্য ঠাকুর অনুকূল চন্দ্র বলেছেন,

" গুরু ছেড়ে গোবিন্দ ভজে,সে পাপী নরকে মজে।গুরু কৃষ্ণ অভেদ হয় শাস্ত্রের প্রমাণে।এই বাণীর দোহাই নিয়ে অনেক ব্যাভিচার, নিজ স্বার্থ উদ্ধার করছে। ( ইসলাম প্রসঙ্গে, পৃষ্ঠা -১৯৩)

ঠাকুর অনুকূল চন্দ্রও একজন সদগুরু। সদগুরুরা সব সময় ভগবানের কথাই বলেন।কারন ভগবানকে না পেলে কোন দিন মুক্তি লাভ হয় না।সদগুরুরা ভগবানের পরম ভক্ত হয়, তাই তারা শিষ্যকে সব সময় ভগবানের পথে নিয়ে যান। আর ঠাকুর অনুকূল চন্দ্র এতই উদার, তিনি কখনোই বলেননি যে শুধু আমার কাছ থেকেই দীক্ষা নিতে হবে। তিনি বলেছেন, যেখান থেকেই নেও সদগুরুর কাছ থেকে নিও।

১ / ভগবানকে পেতে গেলে সদগুরুর শরণাপন্ন হতে হয়। ( আলোচনা প্রসঙ্গে - ২১)

২ / প্রশ্ন: আমি কোথায় দীক্ষা নেব?
     শ্রী শ্রী ঠাকুর : যেখান থেকে নেও, সদগুরুর কাছে থেকে নিও। ( আলোচনা প্রসঙ্গে -২২, পৃ.৩২০)

৩/ যা! তোর ভয় কিসের?  তুই নাম নিয়েছিস তোর গুরু আছে,ভগবান আছেন,তুই সেই পথে চলবি।ভগবানকে ভালবাসবি,ভগবান কাউকে ছাড়েন না।তোরাও তেমনি কাউকে ফেলবি না,কাউকে ছাড়বি না।সকলকেই ভালবাসবি,তাদের সেবা করবি।খুব করে নাম করবি,স্ফূর্তিতে কাম করবি। ( আলোচনা প্রসঙ্গে, ৬)

                    অবতার
                  --------------

                  ## বর্তমানে হিন্দু সমাজের বড় একটি কুসংস্কার হল, আমরা যাকে খুশী তাকেই অবতার, যুগাবতার, পুরুষোত্তম, পূর্ণ ব্রহ্ম  এসব নাম দিয়ে অধর্ম প্রচার করে থাকি।এই সব মিথ্যা অবতারদের জন্য হিন্দু সমাজে দলা -দলি, হিংসা -হিংসী, করে হিন্দু সমাজ ভেঙ্গে টুকরো টুকরো হয়ে যাচ্ছে। হিন্দু হিন্দু ভাই ভাই এ কথা এখন আর কেউ বলতে চায় না। গুরু ভাই, অমুক সংঘের ভাই ভাই হয়ে গেছে। ১৭৩০ সাল থেকে ১৮৮৮ সাল পর্যন্ত প্রসিদ্ধ ৭ জন অবতারের সৃষ্টি হয়েছে, আর ছোট খাট বহু অবতারের সৃষ্টি হয়েছে।

তাই হিন্দু সমাজকে এক করার জন্য, ভগবান বানানো,মিথ্যা অবতার বানানো, এসব কুসংস্কার দূর করার জন্য, ঠাকুর অনুকূল চন্দ্র বলেছেন,

১/ দ্যাখ ভাই, আমি গুরুগিরি, অবতার টবতার বড় ঘৃণা করি।আমার দেশে দুই একবার হরি বললেই অবতার হয়ে পড়ে।( পূণ্যপুথি, ৫৬/১২)

২/ আমি অবতারও নই,ভগবানও নাই।তবে তুমি ভগবানকে ভালবাস,তার পথে চল,মানুষ যাতে শ্রদ্ধা করে তেমনভাবে চল,তবে ভাল হবে।( আলোচনা প্রসঙ্গে, ২১, পৃষ্ঠা- ৩০)

৩/ ঠাকুর অনুকূল চন্দ্রের কিছু বিপথগামী শিষ্যরা, ঠাকুর অনুকূল চন্দ্রকে যুগাবতার প্রচার করতো, তখন তিনি অনেক রাগ করতেন এবং তাদেরকে নিষেধ করতেন।( জীবনি গ্রন্থ/রবিন্দ্রনাথ সরকার) 

                 বন্দে পুরুষোত্তম
                -------------------------

                 ## গীতার ১৫ অধ্যায়টির নাম হল পুরুষোত্তম যোগ।আমাদের পুরুষোত্তমের সাথে যুক্ত হতে হবে। গীতায় (১৫/১৮) শ্রীকৃষ্ণ বলেছেন, বেদে আমি পুরুষোত্তম নামে বিখ্যাত। অর্থাৎ ভগবান শ্রীকৃষ্ণ হচ্ছেন পুরুষোত্তম। ঠাকুর অনুকূল চন্দ্র পুরুষোত্তম ভগবান শ্রীকৃষ্ণের ভক্ত।তাই তিনি সব সময় শ্রীকৃষ্ণের ধ্বনি দিতেন, বন্দে পুরুষোত্তম। এবং তার অনুসারিদেরও তিনি বন্দে পুরুষোত্তম ধ্বনি দিতে বলতেন।

১/ উদাত্ত কন্ঠে বল - বন্দে পুরুষোত্তমম।( আদর্শ বিনায়ক - ২৩৯)

                      সাধু হও
                     --------------

                ## ঠাকুর অনুকূল চন্দ্র  সব সময় চাইতেন, সমাজে সাধু মানুষদের সংখ্যা বৃদ্ধি পাক।কারন সাধু বা ভাল মানুষদের সংখ্যা বৃদ্ধি হলেই সমাজ ভাল থাকবে।কিন্তু ঠাকুর অনুকূল চন্দ্র চাইতেন সাধু না  হয়ে শুধু শুধু সাধুর পোশাক ( ধূতি,পাঞ্জাবি, মালা,তীলক,টিকি,পৈতা,প্রভৃতি) পড়ে ঘুড়ে বেড়িয়ো না।কারন সাধু না হয়ে, যারা সাধুর পোষাক  পড়ে, তাদের উদ্দেশ্য ভাল নয়,তারা স্বার্থ সিদ্ধির জন্য এই পোশাক ধরেছে।
ঠাকুর অনুকূল চন্দ্র চাইতেন,তুমি সাধু হয়ে, সাধুর পোশাক পড়।শাস্ত্রে সাধুদেরও পোশাক চিহ্নের কথা বলা হয়েছে। স্কুলে ভর্তি হলে স্কুল ড্রেস পড়তে হয়। স্কুলে ভর্তি না হয়ে শুধু শুধু স্কুল ড্রেস পড়ে ঘুড়ে বেড়ানো অপরাধ, আবার স্কুলে ভর্তি হয়ে স্কুলের নিদিষ্ট পোশাক না পড়াও অপরাধ।হিন্দু বিবাহিত মহিলাদের শাখা সিঁদুর চিহ্ন, বাহ্মণের পৈতা চিহ্ন, এগুলো পরিধান না করা, তাদের জন্য অপরাধ।  এ রকম ডাক্তার, আর্মি, উকিল এদেরও নিদিষ্ট পোশাক পড়েছে, যা তাদের কাজের প্রতি দায়িত্বশীলতা বৃদ্ধি করে।তেমনি সাধুদেরও পোশাক তাদের ভক্তি পথে অগ্রসর হতে সাহায্য করে, যা সাধুদের শাস্ত্র পথে চলতে দায়িত্বশীল করে।
তাই ঠাকুর অনুকূল চন্দ্র চাইতেন সাধু হয়ে  সাধুর পোষাক পরিধান করুক।

১/ সাধু সেজো না, সাধু হও।( সত্যানুসরন)

                  ভক্ত ও ভগবান
               ---------------------------

                    ## ভক্ত ও ভগবানের সম্পর্ক প্রেমময় সম্পর্ক, মধুর সম্পর্ক। ভক্ত ও ভগবানের সম্পর্ক কেমন, সে বিষয়ে ঠাকুর অনুকূল চন্দ্র বলেছেন,

১/  ভক্ত যে, সে শুধু নৈর্ব্যক্তিক ধারণা নিয়ে খুশি থাকতে চায় না।সে চায় তার বাস্তব প্রকাশ।তাকে প্রীত করেই প্রীত হতে চায়,এর মধ্যই জীবনের সম্ভোগ। তাদের কাছে বাসুদেবই সব।সব কিছু তত্ত্ব ও বস্তুর সংহত পরিপূর্ণতা যা,তার থেকে কিছুই বাদ দিতে চায় না।তাই তারা বাসুদেবকেই আঁকড়ে ধরে।কারন,তার মধ্যেই  আছে সব কিছু তত্ত্ব ও বস্তুর সুসঙ্গত কেন্দ্রায়িত সমাবেশ। ( আলোচনা প্রসঙ্গে - ২১ পৃষ্ঠা ৮০)

২/ আমরা তাকে উপভোগ করতে চাই।তিনি প্রভু- আমি দাস।তিনি আমাদের ভালবাসের, তাতে আমাদের লাভ নেই।আমরা তাকে যত ভালবাসি,ততোই আমাদের লাভ। ( আলোচনা প্রসঙ্গে -২২ খন্ড, ২৪/১/১৯৫৪)

৩/ যারা ভগবানের জন্য লেগে বেঁধে খাটে, মানুষের জন্য খাটে, তাদের দেখলে আমার খুব ভাল লাগে।ওতে হাড়মাংশ রক্ত পর্যন্ত শুদ্ধ হয়ে যায়।( আলোচনা প্রসঙ্গে - ২২ খন্ড,২৩/১০/১৯৫৩)

৪/ নাম করে রোগ সারাব,কিছু পাব এ বুদ্ধি নিয়ে নাম করা ভাল না।তাকে ভালবেসে তারই জন্য নাম করা ভাল। ( আলোচনা প্রসঙ্গে -২২ খন্ড,৮/৭/১৯৫৩)

৫/ ভক্তের কাছে কোন কষ্ট থাকে না।বাঞ্চিতের জন্য যা করনীয় তা করতে না পারাটাই সে নিজের সর্বনাশ বলে মনে করে। ( আলোচনা প্রসঙ্গে -২২ খন্ড,২৬/৫/১৯৫৩)

৬ / ভগবানের চাকর যে হয়, সে যে কার চাকর না, তা ভাবাই কঠিন। ( আলোচনা প্রসঙ্গে -)

৭/ পয়সা কড়ির জন্য ভগবানকে ভালবাসতে নেই, ভগবান সবই টের পান।তাতে তিনি ভাবেন,ও তো আমাকে ভালবাসে না, ভালবাসে পয়সা। ( আলোচনা প্রসঙ্গে -)

৮/ ভগবানকে যত ভালবাসবে গভীর ভাবে,ততই সুদিন অবশ্যম্ভাবী হয়ে উঠবে।তাকে ভালবাসতে পারলে কুদিন ও কুদিন থাকে না, সুদিন হয়ে দাঁড়ায়। ( আলোচনা প্রসঙ্গে -)

৯/ ভক্তি যদি থাকে, সে ভগবানকে আপন করে ফেলে। ( আলোচনা প্রসঙ্গে -)

১০/ ভক্তের থাকে তদর্থী ক্লেশ সুখ প্রিয়তা।সে কষ্টকে কষ্ট মনে করে না।সে তার জন্য সব কষ্টকে আনন্দে বরন করে নেয়। ( আলোচনা প্রসঙ্গে -)

১১/ যা পার ভগবানের জন্য কর।( অালোচনা প্রসঙ্গে -)

১২/ ভগবানকে পেতে হলে সর্বহারা হতে হবে ভেবে ভয় করো না,তাকে পাওয়া মানে সবকে পাওয়া,ব্যাঙের বুদ্ধি ভয়ে প্রস্রাব করে পালান,তুমি কি তাই করবে? ব্যাঙই থাকবে? ব্যাঙ থাকে ব্যাঙেরই জগতে। ( আলোচনা প্রসঙ্গে -)

              ** মহামানব, সিদ্ধ পুরুষ,পরম ভক্ত, সমাজ সংস্কারক শ্রী শ্রী ঠাকুর অনুকূল চন্দ্রের উদ্দেশ্যে অনন্ত কোটি প্রণাম।

জয়গুরু
হরেকৃষ্ণ
নমস্কার

সমীর চন্দ্র পন্ডিত