Monday, August 17, 2020

শুভ জন্মাষ্টমী, ২০২০

শুভ জন্মাষ্টমী / আবির্ভাব তিথি :
★★★★★★★★★★★★★★

পরমেশ্বর  ভগবান শ্রীকৃষ্ণের ৫২৪৭ তম অাবির্ভাব তিথি উপলক্ষ্যে সবাইকে জানাই,কৃষ্ণপ্রীতি ও শুভেচ্ছা।

আবির্ভাব তিথিকেই আমরা জন্মাষ্টমী নাম দিয়েছি।আবির্ভাব শব্দের অর্থ, যিনি অবতরণ করেন বা নিজেকে প্রকাশ করেন।

শ্রীকৃষ্ণের আবির্ভাব:
*******************

গীতার শ্লোক দিয়েই শুরু করি, পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণ বললেন, (৪/৬)

** " যদিও আমি জন্মরহিত এবং আমার চিন্ময় দেহ অব্যয় এবং যদিও আমি সর্বভূতের ঈশ্বর, তবুও আমার অন্তরঙ্গা শক্তিকে আশ্রয় করে,আমি আমার আদি চিন্ময় রুপে আবির্ভূত হই।"

ভগবানের জন্ম দিব্য ( গীতা, ৪/৯), অর্থাৎ সাধারন মানুষের মত নয়।

ভগবান শ্রীকৃষ্ণ, দেবকী এবং বসুদেবের পুত্র রুপে আসলেন,কারন তাহারা পূর্বজন্মে ভগবানকে পুত্র রুপে চেয়ে ছিলেন।তাই ভগবান সরাসরি বিষ্ণু রুপেই তাদের পুত্র হিসেবে আসলেন।

** ভগবতে (১০/৩/৪৪) বলা হয়েছে,"পূর্ব জন্মের কথা স্মরণ করবার জন্যই আমি তোমাদের বিষ্ণু রুপ প্রদর্শন করতেছি।তা না হলে,আমি যদি একটি সাধারন  নরশিশু রুপে আবির্ভূত হতাম,তবে তোমরা বিশ্বাস করতে না যে,শ্রীবিষ্ণুই তোমাদের পুত্র রুপে আবির্ভূত হয়েছেন।"

বসুদেব তখন বিষ্ণু রুপী পুত্রকে দেখলেন,
আর বললেন।

** ভাগবত (১০/৩/১০) বসুদেব তখন দেখলেন যে, সেই নবজাত শিশুটির নয়নযুগল পদ্মের মতো, তার হাতে শঙ্খ, চক্র, গদা এবং পদ্ম। তার বক্ষে শ্রীবৎস চিহ্ন এবং গলদেশে কৌস্তুভ মনি বিরাজমান। তার পরনে পীত বসন, তার অঙ্গ কান্তি নিবিড় মেঘের মতো শ্যামল, তার কেশদাম উজ্জল এবং তার মুকুট ও কর্ণ কুণ্ডল বৈদুর্য - মণিচ্ছটায় অস্বাভাবিক ভাবে উজ্জ্বল।  সেই শিশুটি অত্যন্ত দীপ্তিশালী মেখলা, কেয়ূর,। বলয় প্রভৃতি অলংকারে শোভিত।

** ভাগবত (১০/৩/১১)  তার অসাধারণ পুত্রটিকে দর্শন করে বসুদেবের নয়নযুগল বিস্ময়ান্বিত হয়েছিল। চিন্ময় আনন্দে মগ্ন হয়ে শ্রীকৃষ্ণের আবির্ভাব উৎসবে মনে মনে দশ হাজার গাভী, ব্রাহ্মণদের দান করেছিলেন।

**ভাগবত (১০/৩/১২) বসুদেব বুঝতে পেরেছিলেন যে, সেই শিশুটি পরমেশ্বর ভগবান শ্রী নারায়ন। সেই সত্য নিশ্চিতভাবে হৃদয়ঙ্গম করে তিনি নির্ভয় হয়েছিলেন। এবং অবনত শরীরে কৃতাঞ্জলি হয়ে একাগ্রচিত্তে স্বাভাবিক কান্তির দ্বারা সূতিকাগৃহ উজ্জলকারী সেই বালকের স্তব করতে লাগলেন।

** ভাগবত (১০/৩/৩০) হে ভগবান! আপনি সর্বব্যাপ্ত পরমেশ্বর, এবং শঙ্খ, চক্র, গদা এবং পদ্ম সুশোভিত আপনার চিন্ময় চতুর্ভূজ রুপ এই জগতের পক্ষে অস্বাভাবিক।দয়া করে আপনি আপনার এই রূপ সংবরণ করুন ( এবং একটি সাধারণ নর শিশুর রূপ ধারণ করুন, যাতে আমি আপনাকে কোথাও লুকিয়ে রাখার চেষ্টা করতে পারি)

** ভাগবত (১০/৩/৩১) প্রলয় এর সময়ে সমগ্র চরাচর সৃষ্টি আপনার চিন্ময় শরীরে প্রবেশ করে এবং আপনি অনায়াসে তা ধারণ করেন। কিন্তু এখন সেই চিন্ময় রূপ আমার গর্ভে জন্মগ্রহণ করেছে। মানুষ তা বিশ্বাস করতে পারবে না এবং তাই আমি তাদের উপহাসাম্পদ হব।

** ভাগবত( ১০/৩/৪৬)   ভগবান শ্রীবিষ্ণু  তাদের সমক্ষেই তিনি তার অন্তরঙ্গা শক্তির দ্বারা নিজেকে একটি প্রাকৃত শিশুতে রূপান্তরিত করেছিলেন।

ভগবান মানবরুপ ধারন করেছেন বলে,তাকে সাধারন মানুষ ভাবা নির্বুদ্ধিতার পরিচয়।

যে লোক অজ্ঞানবশতঃ এই হৃষীকেশকে মানুষমাত্র বলিবে সে মন্দবুদ্ধি, সকলে তাকে ‘নরাধম’ বলিবে ৷”
(মহাভারত, ভীষ্মপর্ব, ৬৫/১৯)
------------------------------------------------------
বিষ্ণু ও কৃষ্ণ :
************
আমরা এতক্ষণ ভগবানের আবির্ভাব সম্পর্কে জানলাম।
এবং এও জানলাম, বিষ্ণুই কৃষ্ণ বা কৃষ্ণই বিষ্ণু। শাস্ত্রে কৃষ্ণ এবং বিষ্ণুকে কখনো আলাদা করে বলা হয়নি, শুধু দুটো রুপ মাত্র। কৃষ্ণ দ্বিভুজ এবং বিষ্ণু চতুর্ভুজ।
হে কৃষ্ণ, হে নারায়ন, হে গোবিন্দ, হে বিষ্ণু, এভাবেই দ্বিভুজ কৃষ্ণ এবং চতুর্ভুজ বিষ্ণুকে ডাকা হয়।

গীতাতেও (১০/২১) ভগবান শ্রীকৃষ্ণ বললেন,"আদিত্যদের মধ্যে আমি বিষ্ণু। "
আবার অর্জুন শ্রীকৃষ্ণকে বিষ্ণু বলে সম্বোধন করলেন,গীতা(১১/২৪) " হে বিষ্ণু। "
আবার গীতেই ভগবান শ্রীকৃষ্ণ বিষ্ণু রুপ ধারন করলেন,গীতা ( ১১/৪৯) " আমার এই চতুর্ভুজ রুপ দর্শন কর।"

এভাবে মহাভারতেও বলা হয়েছে 
“সেই ভগবান বিষ্ণুই দুর্জ্জনের নিগ্রহ এবং ধর্ম্মরক্ষার জন্য মনুষ্যমধ্যে অবতীর্ণ হইয়া যদুকুলে জন্মিয়াছিলেন; তাঁহাকেই ‘কৃষ্ণ’ বলা হয় ৷” (বনপর্ব, ২২৬/৬৮)

**মহাভারত (বনপর্ব /৩৬/২৪) "কৃষ্ণরুপি বিষ্ণু। "

-----------------------------------------
শ্রীকৃষ্ণ কে?
*********

১/ শ্রীকৃষ্ণ পরমেশ্বর ভগবান স্বয়ং। ( ভাগবত,১/৩/২৮)

২/ যাহার ব্যতিরিক্ত কিছুই নাই এবং যিনি অখিল জগতের বাহিরে থাকিয়া সৃষ্টি স্থিতি ও প্রলয়ের কর্ত্তা,সেই ভগবান বাসুদেবকে নমস্কার। ( বিষ্ণু পুরাণ /১/১৯/৭৮)

৩/ শ্রীকৃষ্ণ বললেন, আমিই সমস্ত জগতের উৎপত্তি ও প্রলয়ের মূল কারন।আমার থেকে শ্রেষ্ঠ আর কেউ নেই।(গীতা,৭/৬-৭)

৪/ শ্রীকৃষ্ণ সর্বব্যাপী পরমব্রহ্ম। (মহাভারত/আদি/১/২১৯)

৫/ কৃষ্ণ ত্রিভূবন্থ সমস্ত চতুর্বিধ প্রাণীরই জন্ম ও মৃত্যুর কারন।(মহাভারত/ সভাপর্ব /৪৩/১৪)

--------------------------------------------
কৃষ্ণ কেন পৃথিবীতে আসলেন:
**************************
কৃষ্ণ পৃথিবীতে আসা,আর না আসাতে কোন কার্য বন্ধ থাকবে না।কোন কার্য করতে তার আসার প্রয়োজন নেই। তবু কেন তিনি আসেন। তিনি আসেন অহৈতকী কৃপা বসত।দুষ্টের দমন আর শিষ্টের পালন, ভগবান এমনিতেই করতে পারতেন,সে জন্য ভগবানের আসা লাগে না।প্রকৃত পক্ষে ভগবান আমাদের প্রতি কৃপা করে আছেন।এবং তিনি আদর্শ মানুষের মত আচরন করেন।যাতে করে আমরা তার কর্মের অনুসরন করতে পারি।

** মহাভারতে (সভাপর্ব /৩৫/১৬) বলা হয়েছে," জগদ্বীশ্বর মঙ্গলময় নারায়ন সকল দেবতাদের যদুবংশে জন্ম নিতে আদেশ করিয়া, নিজে যদুবংশে আসলেন।"

আর
**  ভাগবতে (১০/১৪/৫৫) বলা হয়েছে, "শ্রীকৃষ্ণ সমস্ত জীবের মূল আত্মা।তার অহৈতকী কৃপাবশত,সমগ্র জগতের মঙ্গলের জন্য,তিনি সাধারন মানুষরূপে আবির্ভূত হয়েছেন। তার অন্তরঙ্গা শক্তির প্রভাবে তিনি এটি করেছেন।"

-------------------------------------------------
কৃষ্ণই সবার আদর্শ:
*****************

কৃষ্ণ কেমন, যার মন যেমন।
আপনি যদি আদর্শ মানুষ হতে চান, সকল কাজে নিপুন হতে চান , আপনার বুদ্ধিমত্তাকে যদি উন্নত করতে চান,সকল কাজে সফলতা চান, তবে আপনাকে অবশ্যয় কৃষ্ণকে অনুসরণ করা উচিত।

কৃষ্ণকে জানতে, পড়তে হবে, মহাভারত,হরিবংশ,ভাগবত, বিষ্ণু পুরাণ প্রভৃতি গ্রন্থ।কৃষ্ণ সম্পর্কে জেনে কখনো শেষ করা যায় না।তার মানবলীলাই এত বহুমাত্রিক, আর ঈশ্বরত্ত্ব কল্পনার বাহিরে।
রাজনীতি, কূটনীতি, নীতিশাস্ত্র, রাজধর্ম, সংসার ধর্ম সকল কিছুর আদর্শ ভগবান শ্রীকৃষ্ণ।তাই আমাদের ভগবানের আরাধনার পাশাপাশি, ভগবানের বীরত্বপূর্ণ কর্মেরও অনুসরন করা উচিত।

বঙ্কিম চন্দ্র বলেছেন, 
" হিন্দুর আবার জাতীয় আদর্শ আছে নাকি? নাই বটে সত্য, থাকিলে আমাদের এমন দুর্দশা হইবে কেন? কিন্তু একদিন ছিল। তখন হিন্দুই পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ জাতি। সে আদর্শ হিন্দু কে? রামচন্দ্রাদি ক্ষত্রিয়গন সেই আদর্শ প্রতিমার নিকটবর্তী, কিন্তু যথার্থ হিন্দু আদর্শ শ্রীকৃষ্ণ। শ্রীকৃষ্ণ একাধারে সর্বাঙ্গীন মনুষ্যত্বের আদর্শ। হিন্দু ধর্মের আদর্শ পুরুষ সর্বকর্ম কৃৎ, এখনকার হিন্দু সর্ব কর্মে অকর্ম । যেদিন সে আদর্শ হিন্দু দিগের চিত্ত হইতে বিদূরিত হইল, সেই দিন হইতে আমাদের সামাজিক অবনতি। এখন আবার সেই আদর্শ পুরুষ কে জাতির হৃদয়ে জাগ্রত করিতে হইবে। 

----------------------------------------------------
কৃষ্ণ আরাধনা:
**************

কৃষ্ণকে স্থান দিতে হবে, আমাদের হৃদয়ে, মনে প্রাণে।যে কৃষ্ণকে যত ভালোবাসে, সে তত বড় কৃষ্ণ ভক্ত।কৃষ্ণ আমার, আমি কৃষ্ণের,এই ভাব থাকবে সব সময়। 

ভগবান বিষ্ণু, কৃষ্ণ রুপে আসলেন, আবার বিষ্ণু রুপে চলে গেলেন,পথিমধ্যে দেবতাদের বলে গেলেন, (মহাভারত/মোষলপর্ব/৪/৩৩), "নারায়ন বললেন, দেবগন! আমার এই রুপ চতুর্ভুজ যুক্ত,এতদ ভিন্ন দ্বিভুজযুক্ত কৃষ্ণেরুপে মত্ত্যলোকে ছিলাম।তোমরা পৃ্থিবীতে আমার অপ্রমেয় মূর্তির পুজা করিও।"

সর্বশেষ মহাভারতের কথা দিয়েই শেষ করি।
♥♥ যে সকল মানুষ,পদ্মনয়ন কৃষ্ণের পুজা না করিবে, তাহাদেরকে জীবন্মৃত বলিয়া জানিবে,এবং তাহাদের সহিত কখনো আলাপ করা উচিত নয়।♥♥

*************
আবারো সবাইকে জন্মাষ্টমীর শুভেচ্ছা।
কৃষ্ণ আমাদের সবাইকে মঙ্গল করোক।
সবাই ভালো থাকবেন, সুস্থ থাকবেন।

 ♣ সমীর চন্দ্র পন্ডিত
  সনাতন ধর্মের প্রচার।।♣

শারদীয় দূর্গাপুজা

শারদীয় শুভেচ্ছা -২০১৯

জগৎজ্জননী, পরমেশ্বরী, ভগবতী মা আমার:
*********************************
ঈশ্বরের মাতৃনাম দেবী।ঈশ্বরের দুটো রুপ পুরুষ ও প্রকৃতি। শক্তিমান ও শক্তি।একই তত্ত্ব, শক্তির মাধ্যমে শক্তিমানের প্রকাশ আর শক্তিমানকে আশ্রয় করে রয়েছে শক্তি।
শাস্ত্র বিচারে, যিনি ব্রহ্ম, তিনিই শিব,তিনিই বিষ্ণু, তিনিই আবার দেবী পরমেশ্বরী দূর্গা। একজনেরই বিভিন্ন নাম ও বিভিন্ন রুপে প্রকাশ মাত্র।

তাই শাস্ত্রে বিষ্ণু, শিব, দূর্গা নাম উল্লেখ্য করে যা বলা হয়েছে, সব সত্য।কোথাও বিষ্ণু সৃষ্টিকর্তা, কোথাও শিব সৃষ্টিকর্তা, কোথাও দেবী ভগবতী সৃষ্টিকর্তা।
শাস্ত্রবিদগণরা জানেন, বিভিন্ন নাম উল্লেখ্য থাকলেও প্রকৃত পক্ষে এক ঈশ্বরেরই নাম।

"যিনি দুর্গতি বা সংকট থেকে রক্ষা করেন, তিনিই দেবী দূর্গা।দেবী দুর্গা পরমা প্রকৃতি ও সৃষ্টির আদি কারণ। তাঁর অন্যান্য নামসমূহ হল চণ্ডিকা, যোগমায়া, অম্বিকা, বৈষ্ণবী, মহিষাসুরসংহারিণী নারায়নী, মহামায়া, কাত্যায়নী ইত্যাদি।

♣সর্ব্বমঙ্গলমঙ্গল্যে শিবে সর্ব্বার্থসাধিকে।
শরণ্যে ত্র্যম্বকে গৌরি নারায়ণী নমোহস্তু তে।।
(  মার্কন্ডেয়পুরান /৯১/৯)

অনুবাদ - হে সর্ব্বমঙ্গল মঙ্গল্যে!  হে শিবে!  হে সর্ব্বার্থ সাধিকে! হে শরণ্যে! হে ত্র্যম্বিকে! হে গৌরি! হে নারায়নী!তোমাকে নমস্কার।।

♣ সৃষ্টি -স্থিত -বিনাশানাং শক্তিভূতে সনাতনি।
গুণাশ্রয়ে গুণময়ে নারায়ণী নমোহস্তু তে।।
( মার্কন্ডেয়পুরান /৯১/১০)

অনুবাদ- হে সনাতনি! হে গুণাশ্রয়ে! হে গুণাময়ে! হে নারায়নি! তুমি সৃষ্টি স্থিতি ও বিনাশের শক্তি-স্বরুপা,তোমাকে নমস্কার।।

♣ শরণাগতদীনার্ত্ত-পরিত্রাণপরায়ণে।
সর্ব্বস্যার্ত্তিহরে দেবি নারায়ণি নমোহস্তু তে।।
( মার্কন্ডেয়পুরান /৯১/১১)

অনুবাদ- হে দেবি! হে নারায়ণি! তুমি শরণাগত দীন ও আর্ত্তজনগণের পরিত্রাণকারিণী এবং সকলের দুঃখ হারিণী, তোমাকে নমস্কার।। 

বেদ থেকে পুরান সকল গ্রন্থেই দেবীর মাহাত্ম্য বর্ণনা করা হয়েছে।

                     বেদ:
                     *****
ঋগ্বেদে দেবী সুক্ত নামে একটি সুক্ত রয়েছে।ঋগ্বেদের দশম মণ্ডলের ১২৫ সংখ্যক সূক্ত। এই সূক্তে ৮টি মন্ত্র রয়েছে।

১/
 অহং রুদ্রেভির্বসুভিশ্চরম্যহ-
মাদিত্যৈরুত বিশ্বদেবৈঃ ।
অহং মিত্রাবরুণোভা বিভর্ম্যহ
মিন্দ্রাগ্নী অহমশ্বিনোভা ।।১০/১২৫/১

 অনুবাদ- আমি রুদ্র ও বসু রূপে বিচরণ করি। আমি আদিত্য ও বিশ্বদেব রূপে বিচরণ করি। আমি মিত্রাবরুণ [ মিত্র ও বরুণ ] , ইন্দ্র, অগ্নি এবং অশ্বিনীকুমার দ্বয়কে ধারন করি । 

২/
অহং সোমমাহনসং বিভর্ম্যহং
ত্বষ্টারমুত পূষণং ভগম্ ।
অহং দধামি দ্রবিণং হবিস্মতে
সুপ্রাব্যে যজমানায় সুম্বতে ।।১০/১২৫/২

 অনুবাদ- আমি শত্রুনাশক সোমকে ধরিয়া আছি, আমি ত্বষ্টা , পূষা ও ভগদেবকে ধারণ করি। যে যজমানের প্রচুর হবি আছে ও যাহা তিনি দেবোদ্দেশে অর্পণ করেন ও যিনি বিধিমত সোমাভিষেক করেন তাঁহাকে আমি যজ্ঞের ফল দান করি। 

৩/

অহং রাষ্ট্রী সংগমনী বসুনাং
চিকিতুষী প্রথমা যজ্ঞিয়ানাম্ ।
তাং মা দেবা ব্যদধুঃ পুরুত্রা
ভুরিস্তাত্রাং ভূর্য্যাবেশয়ন্তীম্ ।।১০/১২৫/৩

 অনুবাদ- আমি রাষ্ট্রী, রাষ্ট্রের অধীশ্বরী । রাজ্যরক্ষার্থ যে সম্পদের প্রয়োজন আমি তাহার বিধানকর্তা । সংসারের শান্তিলাভের জন্য যে ব্রহ্মজ্ঞান প্রয়োজন, আমি তাহাই জানি। আমি এক হইয়াও বহুরূপা । সর্ব জীবে আমি বহু রূপে প্রবিষ্ট হইয়া আছি । দৈবী সম্পৎশালী দেবতাগণ যাহা সাধন করেন সকলই আমার উদ্দেশ্যে সম্পন্ন হয় । 

৪/
ময়া সো অন্নমত্তি যো বিপশ্যতি
যঃ প্রাণিতি য ঈং শৃণোত্যুক্তম্ ।
অমন্তবা মাং ত উপক্ষিয়ন্তি
শ্রুধি শ্রুত শ্রদ্ধিবং তে বদামি ।।১০/১২৫/৪

 অনুবাদ- যে অন্নাহার করে, যে দর্শন করে , যে প্রাণধারণ করে , যে বাক্য শ্রবন করে , সে ব্যক্তি আমাদ্বারাই ঐ সকল কর্ম সাধন করিয়া থাকে । আমার ঈদৃশ স্বরূপ তত্ত্ব যাহারা জানে না তাহারা হীন দশা প্রাপ্ত হয় । শোনো তোমাকে বহু সাধন লব্ধ বার্তা বলিতেছি । 

৫/
অহমেব স্বয়মিদং বদামি জুষ্টং
দেবেভিরুত মানুষেভিঃ ।
যং কাময়ে তং তমুগ্রং কৃণোমি
তং ব্রহ্মাণং তমৃষিং তং সুমোধাম্ ।।১০/১২৫/৫

 অনুবাদ- আমি নিজে সেই কথা বলিতেছি, যাহা দেবগণ ও মনুষ্যগণ সকলে জানিবার জন্য যত্নপরায়ন । যে যেমন কামনা করে তাহাকে তেমনটি আমিই করিয়া থাকি। ব্রহ্মাণ্ড আমি করি, ঋষিও আমি করি, জ্ঞানী আমারই সৃষ্টি।

৬/
অহং রুদ্রায় ধনুরাতনোমি
ব্রহ্মদ্বিষে শরবে হন্তবা উ ।
অহং জনায় সমদং কৃণোমহং
দ্যাবাপৃথিবী আবিবেশ ।।১০/১২৫/৬

 অনুবাদ- আমি রুদ্রের ধনুক জ্যা যুক্ত করিয়া বিস্তার করি, যাহারা ব্রহ্মদ্বেষী তাহাদের নাশের জন্য। সজ্জনের রক্ষার্থ আমি যুদ্ধ করি। স্বর্গে মর্তে সর্বত্র আমি সংপ্রবিষ্ট হইয়া আছি। 

৭/
অহং সুবে পিতরমস্য মূর্ধন্
মম যোনিরূপস্বন্তঃসমুদ্রে ।
ততো বিতিষ্ঠে ভুবনানু বিশ্বো
তামুং দ্যাং বর্মণোপস্পৃশামি।।১০/১২৫/৭

 অনুবাদ- সর্ব উপরি যে জগতের পিতা তাঁহাকেও আমি প্রসব করিয়াছি । পরম জ্ঞান সমুদ্রের অভ্যন্তরে আমার যোনিস্থান। সর্ব ভুবনে আমি অনুপ্রবিষ্ট। ভূলোকের ঊর্ধ্বে যে দুল্যোক আছে, তাহাও স্থির আছে আমি স্পর্শ করিয়া আছি বলিয়া। 

৮/
অহমেব বাত ইব প্রব্যামা-
রভমানা ভুবনানি বিশ্বা ।
পরো দিবা পর এনা পৃথিব্যৈ-
তাবতী মহিনা সংবভূব ।।১০/১২৫/৮

 অনুবাদ- ভূলোক ভুব ভুব লোকাদি নিখিল বিশ্ব সৃষ্টি করিতে করিতে আমি তাহার উপ্র বায়ূর মত প্রবাহিত হই। মূলতঃ আমি ভ্যুলোক দ্যুলোক সকলের ঊর্ধ্বে । আমি সর্বত ভাবে বিশ্বাতীত, তথাপি নিজ মহিমায় জগন্ময়ী এই বিশ্বরূপ ধারিনী হইয়া আছি । 

           মার্কন্ডেয়পুরান:
           **************

চন্ডীগ্রন্থ মার্কন্ডেয় পুরানের অন্তর্গত।
মার্কন্ডেয়পুরানের ৮১ অধ্যায় থেকে ৯৩ অধ্যায় পর্যন্ত চন্ডীগ্রন্থ। চন্ডীগ্রন্থে ৭০০ শ্লোক রয়েছে। 

১/ সেই ভগবতী মহামায়াই জ্ঞানীদিগের চিত্ত সকল বলপূর্বক আকর্ষণ করিয়া মোহে নিক্ষেপ করিতেছেন।( ৮১/৪২)

২/ সেই দেবী এই সচরাচর জগৎ সৃজন করিয়াছেন।তিনিই প্রসন্না হইয়া মনুষ্যদিগের মুক্তিপ্রদ বর দান করেন।(৮১/৪৩)

৩/ তিনিই মুক্তির উৎকৃষ্ট হেতুস্বরুপা সনাতনী ব্রহ্মজ্ঞানস্বরুপা বিদ্যা।তিনি সংসার-বন্ধন,জন্ম ও মৃত্যু প্রভৃতির হেতু;তিনি ঈশ্বর গণেরও ঈশ্বরী।(৮১/৪৪)

৪/সেই জগন্মূর্ত্তি মহামায়া নিত্যা-উৎপত্তি-বিনাশ-দুহিতা।তিনি সমুদয় বিশ্বই ব্যাপিয়া  রহিয়াছেন।(৮১/৪৭)

৫/ হে দেবি!তুমি সেই প্রসিদ্ধ গায়েত্রী স্বরুপা।হে দেবী! তুমিই সেই সর্ব্বোৎকৃষ্ট জগজ্জননী প্রকৃতি স্বরুপা। (৮১/৫৫)

৬/ হে দেবী!তুমিই এই জগতের সৃষ্টি করিতেছ,তুমিই ইহাকে ধারন করিতেছ,তুমিই ইহাকে পালন করিতেছ এবং প্রলয়কালে তুমিই এই জগৎকে গ্রাস করিয়া থাক।(৮১/৫৬)

৭/ হে দেবী! তুমি ভগবতী সর্ব্বোৎকৃষ্ট মোক্ষ বিদ্যা।তুমি শব্দময় বেদত্রয়স্বরুপা এবং প্রণবযুক্ত মনোহর পদপাঠশালী ঋক,যজুঃ ও সামবেদের আশ্রয় স্বরুপা। (৮৪/৯)

৮/ হে দেবী!তুমি দুর্গা, কারন তুমি ভবসাগরে অদ্বিতীয় নৌকাস্বরুপা।তুমি মধুকৈটভভারি নারায়নের একমাত্র হৃদয়াধিবাসিনী লক্ষী এবং তুমিই মহাদেবের উৎকর্ষকারিণী গৌরি।(৮৪/১০)

৯/ দেবী কহিলেন,এই জগতে একা আমিই বিদ্যমানা।আমা ব্যাতীত অপর দ্বিতীয়া কে আছে? এই সকল শক্তিস্বরুপা আমার বিভূতি। (৯০/৩)

১০/ হে দেবী! তুমি অনন্তবীর্য্যা বৈষ্ণবী শক্তি,তুমি সংসারের হেতুভূতা পরমা মায়া,তুমি সমস্ত বিশ্বকেই সম্মোহিত করিয়া রাখিয়াছ।(৯১/৪)

১১/ হে দেবি! সমস্ত বিদ্যাই তোমার মূর্তি বিশেষ এবং ত্রিভুবনে যত স্ত্রী আছে,সকলই তোমার মূর্তিবিশেষ,হে জননী!  তুমি একাই এই বিশ্ব ব্যাপিয়া রহিয়াছ।(৯১/৫)

১২/ শরৎকালে বার্ষিকী যে মহাপূজা কৃত হয়,সেই পূজাকালে আমার এই মাহাত্ম্য ভক্তিপূর্ব্বক শ্রবন করিলে মনুষ্য মৎপ্রসাদে সর্ব্বপ্রকার বিপদ হইতে মুক্তিলাভ করে এবং ধন, ধান্য ও সুত সমন্বিত হয়। (৯৩/১০)

          বৃহন্নারদীয় পুরাণ:
          ****************

১/ বিষ্ণুর পরমা শক্তি জগৎকর্ত্রী,তিনি ভাব এবং অভাব স্বরুপা ও বিদ্যা ও অবিদ্যা নামে তিনিই পরিচিত। (৩/৬)

২/ মহাবিষ্ণুর এই মায়া মহাবিষ্ণু হইতে বিভিন্ন। এই জ্ঞান যতদিন থাকে, ততদিন মায়া তাহাকে সংসার-বন্ধনে বদ্ধ করেন,অভেদ রুপে প্রতীয়মান হইলে,তিনি সংসার-বন্ধন দূর করেন।(৩/৯)

৩/ বিষ্ণু যেমন জগদব্যাপক,তাহার শক্তিও তদ্রুপ।যেমন-অঙ্গারকে ব্যাপিয়া অবস্থিত অঙ্গারের দাহ শক্তি।(৩/১২)

৪/ মহর্ষিগণের মধ্যে কেহ কেহ সেই শক্তিকে উমা নামে অভিহিত করেন,অন্যে বলেন লক্ষ্মী,অপরে বলেন সরস্বতী, গিরিজা,অম্বিকা  ইত্যাদি নামেও তাহাকে আখ্যাত করা হয়।(৩/১৩)

৫/ ইনিই বিষ্ণুর সেই পরমা শক্তি,জগতের সৃষ্টি-স্থিতি-সংহার তিনিই করেন,ব্যক্ত এবং অব্যক্তরুপে জগৎকে ব্যাপিয়া তিনিই অবস্থিতা। (৩/১৬)

৬/ সেই শক্তিই প্রকৃতি,পুরুষ এবং কাল এই রুপত্রয়ে বর্তমান। এক সেই শক্তিই সৃষ্টি -স্থিতি -লয়ের কারন।( ৩/১৭)

৭/ অন্তর্যামী জগৎ স্বরুপী সর্বসাক্ষী  নিরঞ্জন পরমেশ্বর জগৎ হইতে ভিন্ন ও অভিন্ন রুপে অবস্থিত। (৩/২৭)

৮/ জগতের আশ্রয় মহামায়া তাহারই শক্তি।বিশ্বোৎপত্তির হেতু বলিয়া পন্ডিতেরা সেই মহামায়াকে প্রকৃতি নামে অভিহিত করেন। (৩/২৮)

                 শিব পুরাণ:
                 *****-****

১/ দেবী পরমাত্মা স্বরুপিনী।( বায়বীয় সংহিতা /১৬/৮)

 (( বি.দ্র. সময়ের অভাবে সব গুলো গ্রন্থ থেকে রেফারেন্স গুলো দিতে না পারার কারনে আর্টিকেলটি অপূর্ণ রয়ে গেল।দুঃখিত! পুজার পরে আর্টিকেলটি পূর্ণ করে,সনাতন ধর্মের প্রচার ব্লগে পোষ্ট করা হবে।))

♥♥ মা সবাইকে ভাল রাখোক,মঙ্গলে রাখোক,সুস্থ রাখোক, এই প্রার্থনা মায়ের চরণে।
সবাইকে শারদীয় শুভেচ্ছা, সবাই ভালো থাকবেন।

সমীর চন্দ্র পন্ডিত
সনাতন ধর্মের প্রচার