সনাতন ধর্ম শিক্ষা
---------------------------------------------
দ্বিতীয় অধ্যায়
সাকার - নিরাকার ::
প্রশ্ন: ১। ভগবান সাকার , নাকি নিরাকার?
উত্তর : ভগবান পূর্ণ, স্বয়ংসম্পূর্ণ, সর্বশক্তিমান, তাই ভগবান সাকার এবং নিরাকার উভয়ই।
প্রশ্ন : ২। অনেকে যে বলে ঈশ্বর নিরাকার?
উত্তর : ভগবান সর্বশক্তিমান, তাই তিনি সাকার এবং নিরাকার উভয়ই। তিনি যদি নিরাকার হন, তবে কি তিনি সাকার হতে পারেন না? আবার তিনি যদি সাকার হন, তবে কি তিনি নিরাকার হতে পারেন না? যদি না পারেন, তবে তিনি সর্বশক্তিমান হতে পারেন না। ভগবান পূর্ণ, স্বয়ংসম্পূর্ণ, তাই তিনি অবশ্যয়ই সাকার এবং নিরাকার উভয়ই এবং একই সাথে।
প্রশ্ন: ৩। সাকার -নিরাকারের পার্থক্য কী?
উত্তর : সাকার হল ভগবান শ্রীকৃষ্ণ এবং নিরাকার নির্বিশেষ ব্রহ্ম হলো, ভগবান শ্রীকৃষ্ণের অঙ্গজ্যোতি। নিরাকারকে ব্রহ্ম বা ব্রহ্ম জ্যোতি বলা হয়। উৎস ছাড়া কোন জ্যোতি বা আলোর সৃষ্টি হয় না। দিনের আলোর উৎস হচ্ছে সূর্য। তেমনি ব্রহ্ম জ্যোতির উৎস হচ্ছে ভগবান শ্রীকৃষ্ণ। উদাহরণ স্বরূপ বলা যায়, সূর্য এবং সূর্যের আলো। সূর্য সাকার এবং সূর্যের আলো নিরাকার। দুটি আলাদা নয় একইসাথে সব সময় থাকে, তেমনি - শ্রীকৃষ্ণ সাকার এবং তার দেহের অঙ্গজ্যোতি ব্রহ্ম হচ্ছে নিরাকার । সাকার - নিরাকার একই সাথে সব সময় বর্তমান। গীতায় (১৪/২৭) ভগবান শ্রীকৃষ্ণ বলেছেন, “আমিই নির্বিশেষ ব্রহ্মের প্রতিষ্ঠা বা আশ্রয়।”
প্রশ্ন: ৪। ভগবান কত রুপে বিরাজমান?
উত্তর : ভাগবত অনুসারে ভগবান তিনটি রুপে বিরাজমান- ব্রহ্ম, পরমাত্মা এবং ভগবান। ব্রহ্ম হচ্ছে নির্বিশেষ ব্রহ্ম জ্যোতি, যা পরম পুরুষ পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণের অঙ্গজ্যোতি। এবং পরমাত্মা হচ্ছে প্রতি স্থানে বিরাজিত ভগবানের সর্বব্যাপী অংশ প্রকাশ, যিনি প্রতিটি পরমানুতে বিদ্যমান এবং একই ভাবে প্রতিটি জীবের হৃদয়েও বিরাজমান।
প্রশ্ন: ৫। পরমাত্মা কি?
উত্তর : পরমাত্মা হচ্ছে ভগবান শ্রীকৃষ্ণের অংশ প্রকাশ, তা হল চতুর্ভূজ বিষ্ণু মূর্তি।
প্রশ্ন: ৬। বিষ্ণু কে?
উত্তর : বিষ্ণু হচ্ছে শ্রীকৃষ্ণের স্বাংশ প্রকাশ। কৃষ্ণ ও বিষ্ণু অভিন্ন তবু শ্রীকৃষ্ণ হচ্ছে মূল বা আদি। বিষ্ণু হচ্ছে অংশ কিন্তু শ্রীকৃষ্ণ পূর্ণ। কৃষ্ণ, বিষ্ণু বা নারায়ন রুপে জগৎ পালন করেন।
প্রশ্ন:৭। আমাদের সাকার উপাসনা করা উচিত নাকি নিরাকার উপাসনা করা উচিত?
উত্তর: কখনোই নিরাকার বা শূন্যের উপাসনা করা যায় না। কোন চিহ্ন, রুপ বা অন্য কোন কিছু মাথায় আসবেই। আর সাকার উপাসনা হচ্ছে ভগবানের সাথে সরসারি সম্পর্কিত। আমাদের কোনটা করা উচিত, তা জানার জন্য অর্জুন শ্রীকৃষ্ণকে জিজ্ঞাসা করেছিল, (গীতা,১২/১) ‘তোমার আরাধনা করা উচিত, নাকি নিরাকার ব্রহ্মের উপাসনা করা উচিত। তা শুনে ভগবান শ্রীকৃষ্ণ উত্তর দিলেন, গীতা (১২/২) যারা তাদের মনকে আমার সবিশেষ রুপে নিবিষ্ট করেন এবং অপ্রকৃত শ্রদ্ধা সহকারে নিরন্তর আমার উপাসনা করেন, আমার মতে তারাই সর্বশ্রেষ্ঠ যোগী।’
অতএব, আমাদের সবার উচিত সাকার ভগবান শ্রীকৃষ্ণের উপাসনা করা।
প্রশ্ন: ৮। নিরাকার উপাসনা সম্পর্কে ভগবান কি বলেছেন।
উত্তর : গীতায় (১২/৫), ভগবান শ্রীকৃষ্ণ বলেছেন “যাদের মন ভগবানের অব্যক্ত নির্বিশেষ রুপের প্রতি আসক্ত তাদের ক্লেশ অধিকতর। কারণ অব্যক্তের উপাসনার ফলে দেহধারী জীবদের কেবল দুঃখই লাভ হয়।”
ভগবান নিরাকার উপাসনা নিষেধ করেছেন, এর কারণ হল- নিরাকার উপাসনা করা কষ্ট কর, সঠিক ভাবে অনেকেই পারে না। চোখ বন্ধ করে নিরাকার উপাসনা করতে গেলে, গাছ-পালা, ফুল-ফল, এগুলো মাথায় এসে পড়বে। সঠিক ভাবে উপাসনা হবে না। আবার কেউ যদি সঠিক ভাবে করে মুক্তিলাভ করে তবে পরমপুরুষ ভগবান শ্রীকৃষ্ণকে পাবে না। ব্রহ্ম জ্যোতিতে ভেসে বেড়াবে। তাই প্রকৃত আনন্দ সে পাবে না। আবার সে বিরক্ত হয়ে জড়জগতে চলে আসতে পারে (ভাগবত, ১০/২/৩২) তাই এর ফলও কষ্টকর। অপর দিকে, ভগবান শ্রীকৃষ্ণের উপাসনা করলে আর কোন দিন ফিরে আসতে হবে না (গীতা, ৮/২১)।
প্রশ্ন: ৯। অনেকে সাকার বা মূর্তি পূজা করলে নিন্দা করে কেন?
উত্তর: কেউ কি প্রকৃত পক্ষে নিরাকার উপাসনা করতে পারে? কিছু একটা কল্পনা করেই নেই। নিরাকার বাদীরা অনেক সময় বলে, এই মূর্তি পূজা করে লাভ কি? এর তো কোন ক্ষমতা নেই, নিজের গায়ে মশা পড়লেও তো তাড়াতে পারবে না। যারা এই ধরনের কথা বলে, তাদেরকে যদি বলা হয়, ঘরে তোমার বাবা-মার ছবি আছে, সেই ছবিতে থু থু দাও। তখন সে শুনেই রাগ করবে। ছবিতে কিন্তু তার বাবা স্বয়ং নেই, বাবার রক্ত-মাংসও নেই তবুও সে এই কাজ করবে না। কারণ সে তার বাবাকে ভালবাসে, শ্রদ্ধা করে। আর ভগবানতো সর্বত্র আছেন, তাহলে তার প্রতিচ্ছবি বা বিগ্রহের মধ্যে কি তিনি থাকতে পারে না? ভগবানের বিগ্রহের পূজাকে মূর্তি পূজা মনে করা উচিত নয়। বিগ্রহ হচ্ছে শ্রীকৃষ্ণের অনুমোদিত, যা শাস্ত্র নির্ধারিত উপাদানে নির্মিত এবং শুদ্ধ ভক্ত দ্বারা প্রতিষ্ঠিত। এই বিগ্রহ ভগবানের অনুমোদিত, এই মাধ্যমে ভগবান আমাদের প্রেম ভক্তি গ্রহণ করেন। যেমন- রাস্তায় অনেক ডাক বাক্স রয়েছে তার একটির মধ্যে চিঠি ফেললে, গন্তব্যে চলে যায়। কারণ তা পোস্ট অফিসের অনুমোদিত। তাই বলে যে কোন বাক্সে চিঠি ফেললে কাজ হবে না।
জয় শ্রীকৃষ্ণ
সমীর চন্দ্র পন্ডিত/ samir chandra pondit
No comments:
Post a Comment