Saturday, September 2, 2017

পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণ, সনাতন ধর্ম শিক্ষা /sanatan dharmer prachar

               সনাতন ধর্ম শিক্ষা
---------------------------------------------
                ১ম অধ্যায়

         পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণ::

প্রশ্ন :১। আমাদের সকলের সৃষ্টিকর্তা কে?

উওরঃ পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণ হচ্ছেন আমাদের সকলের সৃষ্টিকর্তা।

প্রশ্ন : ২। কি ভাবে বুঝলাম শ্রীকৃষ্ণ আমাদের সৃষ্টিকর্তা?

উওরঃ কারন বেদ-গীতা সমগ্র শাস্ত্রে বলা হয়েছে, ভগবান শ্রীকৃষ্ণ হচ্ছেন এই বিশ্ব ব্রহ্মান্ডের একমাত্র সৃষ্টিকর্তা।

প্রশ্ন :৩। পরমেশ্বর শব্দের অর্থ কি?

উওরঃ পরমেশ্বর ( পরম + ঈশ্বর) মানে হচ্ছে, যিনি পরম ঈশ্বর।অর্থাৎ ঈশ্বরগণেরও ঈশ্বর। ঈশ্বর শব্দের অর্থ প্রভু।প্রকৃতির এক একটা ক্ষমতা যারা কৃষ্ণের কাছ থেকে প্রাপ্ত হয়েছে,তাদের অনেক সময় প্রভু বা ঈশ্বর বলা হয়।আর এই ঈশ্বরগণেরও যিনি ঈশ্বর,তিনিই পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণ।ব্রহ্ম সংহিতায় (৫/১) বলা হয়েছে,

ঈশ্বরঃ পরমঃ কৃষ্ণঃ সচ্চিদানন্দ বিগ্রহঃ
অনাদিরাদিগোবিন্দঃ সর্বকারণকারণম।।

               " শ্রীকৃষ্ণ হচ্ছেন পরম পুরুষোত্তম পরমেশ্বর ভগবান।তার শ্রীবিগ্রহ অর্থাৎ শ্রীদেহ সৎ- চিৎ আনন্দঘন,অর্থাৎ নিত্য শাশ্বত, চিন্ময় বা জ্ঞানময় এবং চিদানন্দময়।তার কোন আদি নেই।কারণ তিনিই অনাদির অাদি,সব কিছুর উৎস।তিনিই সর্বকারণের আদি কারণ,সকল অস্তিত্বের পরম উৎস।"

প্রশ্ন : ৪। ভগবান শব্দের অর্থ কি?

উওরঃ ভগবান শব্দটি সংস্কৃত। ' ভগ' শব্দের অর্থ ঐশ্বর্য এবং বান শব্দের অর্থ যুক্ত। তাই ভগবান শব্দের অর্থ,যিনি সম্পূর্ণ ভাবে ৬টি ঐশ্বর্য সমন্বিত গুন যুক্ত।বিষ্ণু পুরাণে ( ৬/৫/৪৭) বলা হয়েছে, এই ৬টি গুন হল- ১/ সমগ্র ঐশ্বর্য ( ধন - সম্পদ), ২/ সমগ্র বীর্য ( শক্তিমত্তা) , ৩/ সমগ্র যশ,৪/ সমগ্র শ্রী ( সৌন্দর্য) , ৫ সমগ্র জ্ঞান, ৬/ সমগ্র বৈরাগ্য।

এই ৬টি গুন পূর্ণ মাত্রায় একমাত্র শ্রীকৃষ্ণের মধ্যেই রয়েছে। তাই শ্রীকৃষ্ণই একমাত্র পরমেশ্বর ভগবান।

প্রশ্ন : ৫। ভগবান কি কোন নাম?

উওরঃ ভগবান কোন নাম নয়,এটি হচ্ছে পদবীর নাম।প্রধানমন্ত্রীর যেমন নাম রয়েছে,রাষ্ট্রপতির নাম রয়েছে,বাবারও একটি নাম রয়েছে। এগুলো হচ্ছে পদবী। তেমনি ভগবানেরও নাম রয়েছে, আর তা হল শ্রীকৃষ্ণ।জলকে যেমন বিভিন্ন নামে ডাকা হয়,তেমনি ভগবানকেও বিভিন্ন নামে  ডাকা হয়।যেমন- গোবিন্দ, হরি,নারায়ণ, ব্রহ্ম, কৃষ্ণ,ইষ্ট,বিষ্ণু, রাম ইত্যাদি।

প্রশ্ন : ৬। ভগবান,ঈশ্বর,ঠাকুর,গড সব নাম কি এক জনকেই বুঝায়?

উওরঃ হ্যাঁ, যে যেনামেই তাকে ডাকুক, সে কৃষ্ণকেই ডাকতেছে।ভগবান,ঈশ্বর,ঠাকুর,গড এগুলো শ্রীকৃষ্ণের পদবী। এ কথা গীতায় ( ৪/১১) ভগবান শ্রীকৃষ্ণ বলেছেন," সকলেই সর্বতোভাবে আমার পথ অনুসরণ করে।"
        
যাহারা মনে করে ভগবান,ঈশ্বর মানে কৃষ্ণ নয়,তারা বোকার স্বর্গে বাস করে।কারন কৃষ্ণ ছাড়া দ্বিতীয় কোন ঈশ্বর নেই।

চৈতন্য চরিতামৃতে ( ১/৫/১৪২) বলা হয়েছে," একলা ঈশ্বর কৃষ্ণ, আর সব ভৃত্য।" অর্থাৎ কৃষ্ণ একাই এই বিশ্ব ব্রহ্মান্ডের ঈশ্বর, আর আমরা সবাই হচ্ছি তার সেবক।

প্রশ্ন : ৭। কৃষ্ণ শব্দের অর্থ কি?

উওরঃ কৃষ্ণ সংস্কৃত শব্দ, যার অর্থ হচ্ছে সর্বাকর্ষক। তিনি সর্বাকর্ষক পরম পুরুষ।যিনি সকলকে আকর্ষণ পূর্বক আনন্দ প্রদান করেন।

প্রশ্ন : ৮। ভগবান শ্রীকৃষ্ণ দেখতে কেমন?

উওরঃ ব্রহ্ম সংহিতায় (৫/৩০,৩১) বলা হয়েছে," তিনি ত্রিভঙ্গললিত, গোপবেশ, তার মস্তক ময়ূর পুচ্ছ যুক্ত, তার নয়নদ্বয় পদ্মের পাঁপড়ির মত আয়তাকার ও সুকোমল, তার গলদেশ  শোভমান বৈজয়ন্তী মালা,তার সুন্দর অধরে শোভিত  মোহন মুরলী, তার গাত্র বর্ণ ঘন মেঘের মত নীলাভ, তিনি দিব্য আভরণভূষিত সুন্দরাঙ্গ,তিনি নিত্য নব- নবায়নমান যৌবন সম্পন্ন।"

প্রশ্ন : ৯। ভগবান কোথায় থাবেন?

উওরঃ ভগবান সর্বত্রই থাকেন।তিনি পরমাত্মা রুপে প্রতিটি অনু- পরমাণুর মধ্যে রয়েছেন,আবার প্রতিটি জীবের  হৃদয়েও রয়েছেন। এছাড়া ভগবান শ্রীকৃষ্ণের একটি নির্দিষ্ট ধাম রয়েছে,যা চিন্ময় জগতের সবার উর্ধ্বে অবস্থিত, গোলক বৃন্দাবন ধাম।

প্রশ্ন : ১০। ব্রহ্মা, বিষ্ণু, মহেশ্বর, তিনে মিলে এক ঈশ্বর - কথাটির অর্থ কি?

উওরঃ অর্থাৎ ব্রহ্মা, বিষ্ণু, শিব তিন জনের মিলিত শক্তিই হচ্ছে ঈশ্বর বা ভগবান।আর ঈশ্বর হচ্ছেন ভগবান শ্রীকৃষ্ণ, অর্থাৎ শ্রীকৃষ্ণই ব্রহ্মা, বিষ্ণু, শিব রুপে সমগ্র জগৎকে পরিচালনা করেন।শ্রীকৃষ্ণ ব্রহ্মা রুপে সৃষ্টি করেন,বিষ্ণু রুপে পালন করেন এবং শিব রুপে ধ্বংস করেন।

বিষ্ণু পুরাণে( ১/২/৬২) বলা হয়েছে, " একমাত্র ভগবান শ্রীকৃষ্ণই সৃষ্টি, স্থিতি ও লয় করিবার জন্য ব্রহ্মা, বিষ্ণু ও শিব এইরুপ সংজ্ঞা প্রাপ্ত হন।"

প্রশ্ন : ১১।  কৃষ্ণ কে?  গীতায়, ভাগবতে কৃষ্ণ সম্পর্কে কি বলা হয়েছে?

উওরঃ কৃষ্ণ হচ্ছে সর্বশক্তিমান, সর্বশ্রেষ্ঠ, বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের একমাত্র মালিক,একমাত্র উপাস্য,একমাত্র স্রষ্টা, পরম পুরুষোত্তম, পরমেশ্বর ভগবান।তিনিই সৃষ্টিকর্তা, পালনকর্তা এবং সংহারকর্তা।

গীতা পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণের বাণী।
দেখা যাক ভগবান শ্রীকৃষ্ণ তার
নিজের সম্পর্কে গীতায় কি
বলেছেন-

১/ যে ব্যক্তি কৃষ্ণভাবনায় যুক্ত নয়,তার মন সংযত নয়। (২/৬৬)

২/ সকলেই সর্বতোভাবে আমার পথ অনুসরণ করে।(৪/১১)

৩/ আমি সর্বলোকের মহেশ্বর (মহ+ঈশ্বর)।
(৫/২৯)

৪/ আমিই সমস্ত জগতের উৎপত্তি ও
প্রলয়ের মূল কারণ। (৭/৬)

৫/ আমার থেকে শ্রেষ্ঠ আর কেউ নেই।
(৭/৭)

৬/ পরমাত্মা রুপে আমি সকলের হৃদয়ে
বিরাজ করি। (৭/২১)

৭/ পরমেশ্বর ভগবান রুপে আমি
অতীত,বর্তমান ও ভবিষ্যৎ
সম্বন্ধে সম্পূূর্ণরুপে অবগত। (৭/২৬)

৮/ আমাকে প্রাপ্ত হলে আর পূর্ণজন্ম হয়
না। (৮/১৬)

৯/ সর্বশ্রেষ্ঠ পরমেশ্বর ভগবানকে অনন্যা
ভক্তির মাধ্যমেই কেবল লাভ করা যায়। (৮/২২)

১০/ অব্যক্ত রুপে আমি সমস্ত জগতে ব্যাপ্ত আছি। (৯/৪)

১১/ আমি নিজেই সমস্ত সৃষ্টির উৎস। (৯/৫)

১২/ এই জগৎ আমারই প্রকৃতির অধীন। (৯/৮)

১৩/ আমিই এই জগতের পিতা। (৯/১৭)

১৪/ আমিই এই জগতের বিধাতা
(সৃষ্টিকর্তা) । (৯/১৭)

১৫/ আমি সকলের গতি। (৯/১৮)

১৬/ আমি তাপ প্রদান করি এবং আমি
বৃষ্টি বর্ষণ করি ও আকর্ষণ করি। (৯/১৯)

১৭/ আমিই সমস্ত যজ্ঞের ভোক্তা ও প্রভু।
(৯/২৪)

১৮/ আমি সকলের প্রতি সমভাবাপন্ন।
(৯/২৯)

১৯/ সব কিছু আমার থেকে প্রবর্তিত হয়।
(১০/৮)

২০/ মনুষ্যদের মধ্যে আমি সম্রাট। (১০/২৭)

২১/ অব্যয় অমৃতের,শাশ্বত ধর্মের এবং
ঐকান্তিক সুখের আমিই আশ্রয়। (১৪/২৭)

২২/ আমিই সমস্ত বেদের জ্ঞাতব্য এবং
আমিই বেদান্তকর্তা ও বেদবিৎ। (১৫/১৫)

২৩/ বেদে আমি পুরুষোত্তম নামে বিখ্যাত। (১৫/১৮)

২৪/ সর্ব প্রকার ধর্ম পরিত্যাগ করে কেবল
আমার শরনাগত হও। (১৮/৬৬)

আর ভাগবতে বলা হয়েছে -

১/ ভগবান হচ্ছেন দ্রষ্টা। (৩/৫/২৫)

২/ ভগবান নিত্য আনন্দময় এবং জ্ঞানময়।(৩/৯/৩)

৩/ শ্রীকৃষ্ণ সর্ব মঙ্গলময়।(৩/৯/৭)

৪/ শ্রীকৃষ্ণ পরমেশ্বর ভগবান স্বয়ং। (১/৩/২৮)

৫/ পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণ সর্বকারণের পরম কারণ।( ৩/১১/২৪)

৬/ পরমেশ্বর ভগবানের শক্তি অনন্ত। (৩/৯/২৫)

৭/ ভগবানের রুপ সর্বদাই তরুন।( ৪/৮/৪৬)

৮/ ভগবান একজন পুরুষ।(৪/৮/৪৭)

৯/ শ্রীকৃষ্ণ সর্বশক্তিমান। ( ৪/৯/৬)

১০/ শ্রীকৃষ্ণ সব কিছুর সংহারকর্তা। তার আদি নেই,যদিও তিনি সব কিছুর আদি।(৪/১১/১৯)

             জয় শ্রীকৃষ্ণ

      সমীর চন্দ্র পন্ডিত/ samir chandra pondit 

4 comments: